দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম ও সহস্রাধিক হত্যা করেছে। এখনও কয়েক হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে অনেক শীর্ষ নেতারাও জেলে আছেন। এমন অবস্থার পরও আমরা কেউ পিছিয়ে নেই। আরও উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যত অত্যাচার আসুক, নির্যাতন-নিপীড়ন আসুক আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারকে পরাজিত করব। সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব।
গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘চলমান আন্দোলনে তিন শহিদ নেতার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। অনুষ্ঠানে নিহত তিন বিএনপি নেতার পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব। ৭ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পল্লবী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা আক্তার বর্ষা তার মেয়ে মিথিলা আক্তার মারিয়াকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নিহত মকবুল হোসেনের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী ভালো মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। তবে জানি এই সরকারের সময় আমার স্বামী হত্যার কোনও বিচার পাব না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। গত ২৪ ডিসেম্বর গনমিছিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে নিহত হন বোদা উপজেলা ময়দানদীঘি বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন। তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল আল মাহিকে দেখিয়ে বলেন, এতটুকু ছেলেকে যারা এতিম করেছে তাদের বিচার চাই।
গুলিতে নিহত বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভূঁইয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, আমার স্বামী আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বর্বরতার শিকার। তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলার বাদী আমি নিজেই। তাই ঘর থেকে বেরোতেই এখন ভয় পাই। ছেলের শোকে আমার শ্বশুর মারা গেছেন, শাশুড়িও অনেক অসুস্থ। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমার স্বামীর সুষ্ঠু বিচার যেন আমি পাই। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা মির্জা ফখরুল বলেন, যারা প্রাণ দিয়েছেন তারা একটি আদর্শ ও লক্ষের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। নিজের দেশকে মুক্ত ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ২২ আগস্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যখন গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করি, তখন থেকে আমাদের ১৫ জন ভাই শহিদ হয়েছেন। তারা পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় শহিদ হন। এই ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নিহত নেতাকর্মীরা বীরের মতো শহিদ হয়েছেন। তারা দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করে গেছেন তা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা আরও ত্যাগ শিকারের জন্য শপথ গ্রহণ করেছেন।
ফখরুল বলেন, যুগে যুগে বড় কিছু অর্জন করতে গেলে জীবন দিতে হয়। একাত্তর সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছিল। এখন একটা দানবীয় শক্তি আমাদের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে নেই।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে নির্বাসিত জীবন কাটালেও তিনি এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতি মুহূর্তে কাজ করছেন বলেও জানান মির্জা ফখরুল। গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার প্রতিটি নেতাকর্মীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, পঞ্চগড় জেলার সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।