দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : বৈধ উপায়ের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ ও কম সময়ে দেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগ অর্থ আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। আর এ সুযোগ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশি এবং অন্যান্য দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত প্রবাসী অধিকাংশ বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে তারা দেশে পরিবারের কাছে অর্থ পাঠানোর জন্য ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে যেতে পারেন না। অবৈধভাবে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা সেই অর্থ সংগ্রহ করে দেশে পাঠাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈধ চ্যানেলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ ও কম সময়ে দেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ থাকায় অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বৈধ চ্যানেলগুলোর সেবাকে আক্ষরিক অর্থে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের কাছে নিতে না পারলে এবং পাঠানো অর্থ তাৎক্ষণিকভাব সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানো না গেলে দেশ বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হবে।
সূত্র জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিভিন্ন অসুবিধা চিহ্নিত করে তা সমাধানে সুপারিশমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। এর আগে প্রতিবেদন প্রণয়ন উপলক্ষে মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে। ইতিমধ্যে প্রতিবেদনের কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈধ চ্যানেল বনাম হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর যেসব সমস্যা রয়েছে তা তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে দেশে সুবিধাভোগীদের অর্থ সংগ্রহ করতে সময় ও অর্থ ব্যয় করে ব্যাংকে যেতে হয়। অন্য দিকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে কোনো সময় ও অর্থ ব্যয় হয় না, টাকা পৌঁছে যায় প্রাপকের দোরগোড়ায়। ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্টে (এফসিএ) এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি পাঠাতে না পারার কারণে উচ্চ আয়ের প্রবাসীরা অনেক সময় দেশে অর্থ পাঠান না; মানিলন্ডারিং আইনের কড়াকড়ি থাকায় অনেকে নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রশ্ন এড়াতে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।
এছাড়া, দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না করেই বিদেশে গমন; ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীদের সার্ভিস চার্জ দিতে হয়; এক্সচেঞ্জ রেট কম পাওয়া যায়; প্রেরককে ইকামার কপি ও গ্রাহককে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হয়; অনেক সময় ব্যাংক কাগজপত্র চায় (কারো কারো বৈধ কাগজপত্র থাকে না) বিধায় প্রবাসী শ্রমিকরা ব্যাংকে যেতে ভয় পান; ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে ট্যাক্স দিতে হয় বলে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা গুজব ছড়িয়ে থাকেন। এসব কারণে প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার পর দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। বাংলাদেশে শুক্র-শনিবার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে শনি-রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের কারণে সপ্তাহে মাত্র চার দিন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো যায়। অন্য দিকে হুন্ডির মাধ্যমে সপ্তাহে সাত দিনই টাকা পাঠানো যায়। এছাড়া, কর্মস্থল থেকে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো দূরে হওয়ায় অনেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হন। পাশাপাশি হুন্ডির বিষয়ে শ্রমিকদের অজ্ঞতাও রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হুন্ডি ‘বিকাশ’ নামে পরিচিত । প্রতিবেদনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকগুলো কর্তৃক অ্যাপস/ এমএফএসভিত্তিক ব্যবস্থা চালু; কর্মরত শ্রমিকদের ক্যাম্পে গিয়ে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারে সহায়তা করা; রেমিট্যান্স পাঠানোর সার্ভিস চার্জ সুবিধাভোগীদের পুনর্ভরণ করা; রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার হার বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে।