নিজস্ব প্রতিবেদক : পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ঘিরে বিপুল অঙ্কের ঘুস বাণিজ্যে সিনিয়র সচিব শহিদুজ্জামানের উপর অভিযোগ উঠেছে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দায়িত্ব পালন শেষে এখন অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) আছেন।
তিনি এক বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যান। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যনির্ভর রিপোর্টে তার ঘুস বাণিজ্যের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট নিয়ে প্রশাসনের অনেকে বিব্রত। কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চূড়ান্ত তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
এদিকে বিষয়টি ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়িয়েছে। ঘুসের বিনিময়ে যারা পদোন্নতি দিয়েছেন- তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।
সূত্রে জানা যায়- রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস থেকে হাফেজ আহাম্মেদ ওরফে রাশিদ মালবেরী (বিদেশি নাগরিক) নামের এক আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হন। ঘটনা জানাজানি হলে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠেন। এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে দুর্নীতিবাজ হিসাবে পরিচিত বেশ কয়েকজন পাসপোর্ট কর্মকর্তা কর্মচারীকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের কেউ কেউ পাসপোর্টের অভ্যন্তরীণ ঘুস-দুর্নীতি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। অধিদপ্তরে বদলি, পদোন্নতি ও কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। এমনকি মাঠ পর্যায় থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশেষ চ্যানেলে কোটি টাকা মাসোহারা আদায় ও ভাগাভাগির অবিশ্বাস্য তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে একজন পরিচালকের বক্তব্যে তৎকালীন সচিব শহিদুজ্জামানের ঘুস বাণিজ্য উঠে আসে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে পদোন্নতি পাইয়ে দিতে ৭৫ লাখ টাকা ঘুস নেন সচিব।
সচিবের বিরুদ্ধে ঘুসের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক উপ পরিচালক পদোন্নতির সময় তার তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন- শহিদুজ্জামান সচিব থাকাকালে নির্ধারিত ডিপিসির (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) বৈঠক নিয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণসহ পদোন্নতি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হয়। একপর্যায়ে তিনি সচিবের দপ্তরে যোগাযোগ করেন। সাক্ষাতের সময় সচিব যথারীতি রুটিন কথাবার্তা বলে বিদায় করেন। তবে সচিবের কক্ষের বাইরে এলে তার অফিসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এগিয়ে আসেন। ভেতরে কী কথাবার্তা হয়েছে জানতে চান তিনি। একপর্যায়ে টেবিল থেকে সাদা চিরকুট টেনে নিয়ে পেনসিল দিয়ে লেখেন ‘কত দিতে পারবেন’। অর্থাৎ সরাসরি ঘুসের অঙ্ক নিয়ে দরকষাকষি শুরু হয়। টাকা না দিলে পদোন্নতি হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে তাদের দুজনকেই ঘুস দিয়ে পদোন্নতি নিতে হয়।
দুদকের অনুসন্ধান : গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মোট ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতিবাজ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে দুদক।