নিজস্ব প্রতিবেদক : টেলিটকের প্রায় ২০৫ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে আছে সংস্থাটির নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার এফডিআর এবং চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকা। জানা গেছে- সম্প্রতি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনকে সরকার সরিয়ে দেয়। বিদায়বেলা তিনি উল্লিখিত অর্থের হিসাব দিতে পারেননি। এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে বিভিন্ন দেশি বিদেশি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। বিভিন্ন সেবা আর কেনাকাটার বিল পরিশোধ না করায় এভাবে সংস্থাটি দেনায় পড়েছে।
এদিকে টেলিটক লুটপাট আর দেনার কবলে পড়ে বেহাল দশায় পড়লেও এর বিদায়ি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনের বেশ রমরমা অবস্থা। নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তাকে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমন ব্যক্তির পদায়নে ওই প্রতিষ্ঠানও নতুন করে ধ্বংস হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন টেলিকমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন- সাহাবুদ্দিন যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্তে দোষী সাব্যস্থ না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোথাও না কোথাও তো বসাতে হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, এটা তার স্থায়ী জায়গা নয়।
জানা গেছে- টেলিটকের এ সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছেন। এছাড়া বদলির পর দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার এফডিআর আর চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেননি তিনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই অর্থের ব্যয় কোন খাতে হয়েছে তার জন্য গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। এমন একজন ব্যক্তিকে পুনরায় কেন এমন গুরু দায়িত্বে দেওয়া হলো সেটাও ভাবনার বিষয়।
টেলিটকের দায়দেনা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক ঋণ আছে ১২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ৮৩ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য টেলিটককে চিঠি দিয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও কয়েকশ কোটি টাকা দেনা রয়েছে টেলিটকের। টাওয়ার কোম্পানি ই-ডটকো, হুয়াওয়ে এবং সামিটও কয়েকশ কোটি টাকা পাবে।
এ বিষয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন- আমরা টেলিটকের কাছে ৮৩ কোটি টাকা পাব। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন- এই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নেই টেলিটকের। টিকে থাকতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে অন্য কোম্পানির সঙ্গে একীভূত (মার্জার) হতে হবে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সহজে টেলিটকের সিম পাওয়া যায় না। রিচার্জ পয়েন্টও অনেক কম। নেটওয়ার্কের অবস্থাও ভালো নয়। এসব কারণে গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
টেলিটকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন- এমডি সাহাবুদ্দিনের দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েও তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু নামমাত্র বদলি করা হয়েছে। এতে করে বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় তিনি দুর্নীতি করতে পারেন এবং ধ্বংস হতে পারে সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড। ইতঃপূর্বে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে তার অনুগত চক্রকে দিয়ে ওইসব আলামত সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যারা অভিযোগ করেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিটকের সাবেক এমডি সাহাবুদ্দিন বলেন- আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো সবই মিথ্যা। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললাম- আপনারা তদন্ত করে দেখেন। একটি চক্র আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে।