নিজস্ব প্রতিনিধি : টিসিবি’র ডিলার নিয়োগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় সদর উপজেলার যুবলীগের এক নেতার নাম রয়েছে একাধিকবার। এ ছাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নামও রয়েছে।
আজ রোববার থেকে জেলায় টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা প্রশাসক শাহ্গীর আলম। এতে বলা হয়- ৪০ জন ডিলার জেলার নয় উপজেলা ও পাঁচ পৌরসভার ৮৪ হাজার ৩৪৭ জন কার্ডধারীর মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করবেন।
সদর উপজেলার ডিলারদের তালিকা ঘেঁটে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, মেসার্স মদিনা ট্রেডার্স, মেসার্স একতা ট্রেডার্সের নামের পাশে সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলী আজমের মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। নাটাই উত্তর ইউনিয়নের মেসার্স জাকির ট্রেডার্সের পাশের যে মুঠোফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে, সেটি ঢাকার সাভারের এক নারীর। ওই নারী এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। আর মেসার্স একতা ট্রেডার্সের নামের পাশে যুবলীগ নেতার ফোন নম্বর দেওয়া থাকলেও এর স্বত্বাধিকারী মূলত সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বোরহান উদ্দিন সোহাগ। মেসার্স মাইশা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হিমু এন্টারপ্রাইজের নামের পাশেও একই ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। ওই মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া তালিকায় তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের মেসার্স রাজ ভান্ডারের ভুল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলী আজম বলেন- মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সের ডিলার আমি। মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের ডিলার এলেম খাঁ ও একতার ডিলার বোরহান উদ্দিন। তিনটি নামের পাশে আমার মুঠোফোন নম্বর কেন দেওয়া হয়েছে, তা আমি জানি না। কথা হলে এলেম খাঁ জানান- তিনি মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের ডিলার।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে টিসিবি’র ডিলারের ব্যবসা করতে পারেন কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল মেসার্স একতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বোরহান উদ্দিন সোহাগের কাছে। তিনি বলেন- আমি আমার পরিবর্তে স্ত্রীর নামে দেওয়ার জন্য আবেদন করব।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে। সেগুলো হলো পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উপজেলা পরিষদ চত্বরে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স; ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শেরপুর ঈদগাহ মাঠে মেসার্স শাহাদাৎ এন্টারপ্রাইজ; ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহরের বর্ডার বাজার ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব প্রাঙ্গণ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শহরের কাজীপাড়া জেলা ঈদগাহ মাঠ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ে মেসার্স মাহদিন এন্টারপ্রাইজ। সদর উপজেলার মজলিপুর ইউনিয়নে মেসার্স ছামিয়া ট্রেডার্স, বুধলে মেসার্স তানিম এন্টারপ্রাইজ, সুহিলপুরে মেসার্স রেদোয়ান ট্রেডার্স, তালশহর পূর্বে মেসার্স রাজ ভান্ডার, নাটাই উত্তর ইউনিয়নে মেসার্স জাকির ট্রেডার্স, নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, সাদেকপুরে মেসার্স মদিনা ট্রেডার্স, রামরাইলে মেসার্স মাইশা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ, মাছিহাতায় মেসার্স আব্দুল গণি এন্টারপ্রাইজ, বাসুদেব ইউনিয়নে মেসার্স হিমা এন্টারপ্রাইজ।
ডিলার নিয়োগে অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার ইউএনও ইয়ামিন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন- বিষয়টি বিকেলে আমাদের চোখে পড়েছে। ফোন নম্বর না পেয়ে একাধিক ডিলারের পাশে একই ফোন নম্বর দিয়েছেন কম্পিউটার অপারেটর। তালিকা সংশোধন করা হয়েছে।’ মেসার্স জাকির ট্রেডার্সের পাশের ফোন নম্বরটি যাচাই করে সংশোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ইউএনও কার্যালয় সূত্র জানায়- টিসিবির পণ্য প্রতিটি ইউনিয়ন প্রাঙ্গণে বিক্রি করা হবে। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫২০ জন কার্ডধারী এবং বাকি ১৫টির প্রত্যেক ডিলার ৫১০ জন করে কার্ডধারীর মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করবেন।
জেলা প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- রমজান মাস শুরুর আগে ও রমজানের মাঝামাঝি সময়ে দুইবার করে একজন কার্ডধারী এ পণ্য পাবেন। প্রত্যেকে দুই কেজি করে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা পাবেন। চিনি ৫৫ টাকা কেজি, মসুর ডাল ৬৫ টাকা কেজি, সয়াবিন ১১০ টাকা কেজি ও ছোলা ৫০ টাকা কেজি দাম ধরা হয়েছে।