টাঙ্গাইল জেলা’র বাসাইল উপজেলা’র সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা কলেজছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি যে কোনো সময় নিজের ওপর হামলা’র আশঙ্কা করছেন কলেজছাত্রী।
ছাত্রীর অভিযোগ- ইউএনও মনজুর হোসেন এলাকার মাদকাসক্ত লোকজনদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওই ছাত্রীকে মানসিকভাবে হয়রানি করছেন ও হুমকি দিচ্ছেন।
২৫ মে বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেজ ছাত্রী এসব অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে ওই কলেজছাত্রী দাবি করেন- মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি নিজে বাদি হয়ে ইউএনও’র নামে পর্ণোগ্রাফি অ্যাক্টে ঢাকায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। সেই মামলায় দ্বিতীয় স্বাক্ষী করা হয়েছে ওই কলেজছাত্রীর গ্রামের এক ব্যক্তিকে। যার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মাদক, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন- মনজুর হোসেন তার প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন তার ছবি এডিট করে ভুয়া ভিডিও দিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তা ছাড়া নামসর্বস্ব কিছু অনলাইন পত্রিকায় ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সকলের মানবিক দৃষ্টি কামনা করেছেন ওই কলেজছাত্রী।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমি অসুস্থ অবস্থায় আমার পরিবারের সঙ্গে রয়েছি। ওই মেয়ের বিষয়ে আমি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। তিনি আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে এসব অভিযোগ করছেন।
উল্লেখ্য- গত বছরের ২০ অক্টোবর ওই কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে দেন। অভিযোগে বলা হয়, বাসাইলের ইউএনও মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফসবুকে পরিচয় হয়। বিয়ের কথা বলে ইউএনও তার সরকারি বাসভবনে ডেকে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
পারিবারিকভাবে তার (ছাত্রীর) বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক হলে তিনি বিয়ের জন্য ইউএনওকে বলতে থাকেন। ইউএনও বিয়ের কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন এবং টাঙ্গাইল শহরের পাওয়ার হাউসের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় তারা দুই মাস একত্র বসবাস করেন। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে নিয়ে ইউএনও ভারতের কলকাতায় যান।
সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে হায়দ্রাবাদ গিয়ে দুজন চিকিৎসা নেন। সেখানে অবস্থানকালে পাসপোর্ট দেখে জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর ৫ অক্টোবর তারা ফিরে আসেন। তারপর থেকে ইউএনও তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন তদন্ত করেন। তদন্ত করে মনজুর হোসেনের ওই কলেজ ছাত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়- গত বছরের নভেম্বর মাসে ইউএনও মো. মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি হন। এরপর চলতি বছরের ৪ মার্চ ইউএনও হিসেবে তাকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় পদায়ন করা হয়। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তাকে প্রত্যাহার করা হয়। (বিজ্ঞপ্তি)