দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিকে ডেকে কড়া বার্তা দিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আজ বুধবার বিকেলে এক ফেসবুক বার্তায় বাংলায় লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের অ্যাম্বাসাডরকে (রাষ্ট্রদূতকে) ডেকেছিলাম। তাকে যা যা বলা দরকার আমরা বলেছি। সব কিছু বিস্তারিত গণমাধ্যমে বলার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই এ বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমে আমরা আর কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো লিখেছেন, বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরো গভীর হবে আসন্ন প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মধ্য দিয়ে, এই প্রত্যাশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই সফর বাংলাদেশের এবং জাপানের সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে বলে আশা করি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাঁর ফেসবুক বার্তায় ভিয়েনা কনভেনশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে দৃশ্যত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আপনাদের কেউ কেউ যদি ভুলে গিয়ে থাকেন। ‘
প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১তম অনুচ্ছেদের প্রথম অধ্যায়ে কূটনীতিকদের গ্রহণকারী রাষ্ট্রের আইন ও প্রবিধানকে সম্মান করার জন্য স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাঁদের সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার বিষয়টি দ্ব্যর্থহীনভাবে সীমিত করে দেয়। এর আগে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মন্তব্যের ব্যাখ্যা চাইবে সরকার।
শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। বিদেশি কূটনীতিকরা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করলে সরকার কঠোর হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি বন্ধুদের পরামর্শের প্রয়োজন নেই। জাপানের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি শুনেছি, পুলিশ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলেছে। আমি অন্য কোনো দেশে এ ধরনের উদাহরণ শুনিনি। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি উচিত নয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বন্ধুদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করে না বাংলাদেশ। কারণ গত চার বছরে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি জাপান সরকার।
ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের নাক গলানো ও মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন ইস্যুতে মন্তব্যের জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ডাকার মাধ্যমে কার্যত ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার সব বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘ কার্যালয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও রীতিনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিল।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে আরো উন্নতিতে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে জাপানের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ সরকার এ বছরই পুরস্কার দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত মঙ্গলবার জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরসহ সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর জাপান সরকারের আমন্ত্রণে টোকিও সফর করবেন। এর আগে জাপানের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে বিব্রত করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের পর আগামী মাসেই তিনি ঢাকা ছাড়তে পারেন। বর্তমানে তিনি বিদায়ী সাক্ষাৎ করছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন।