দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, র্যাব এবং তার নিজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পেছনে তিন বছরের প্রচেষ্টা এবং এক শ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। এ কাজের জন্য চারটি আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগও করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ প্রধান। তবে এসকল কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দোষী করতে চান না ড. বেনজীর আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের কাছে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে নাগরিক সংবর্ধনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বেনজীর আহমেদকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে আইজিপি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, ২০০৯ সাল থেকে নাকি র্যাব ৬০০ লোককে গুম করেছে। অথচ, আমি র্যাবে ঢুকেছিলাম ২০১৫ সালে। তাহলে আমাকে কেন ওই তালিকায় নেওয়া হয়েছে? আমি মার্কিন প্রশাসন অথবা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ, এটা করেছে তারাই, যারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্যে। ২০০৯ সালে আমি এই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরিতে ছিলাম। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, যে ৬০০ লোক গুমের অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের কোনো তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান। তিনি নিজেকে গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর দিক দিয়ে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এরপরও তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যদিও এসব অভিযোগ একেবারেই সত্য নয়। যে সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তখন তিনি র্যাবের দায়িত্বেই ছিলেন না বলে জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেছেন, আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি। এখন চলছে মুক্তির লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত আছে। এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। দেশের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা রুখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, একসময় মনে করা হয়েছিল যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা? আশা করা হয়েছিল, সমাজের চিত্র সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ, এখন দেখা যাচ্ছে, যত ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। ২২ জন তথ্য সন্ত্রাসী আছে। এদের জবাব দিতে হবে।
পুলিশ প্রধান বলেন, তথ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। নোংরা জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র ফ্লাশ করা দরকার। এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপন করতে হবে। তাহলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করার চলমান লড়াইয়ে আমি সবার সাথে আছি। দেশটিকে সবার আগে রেখে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার পথকে সুগম রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।