দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : প্রিয় ক্লাব সান্তোসের মাঠ ভিলা বালমিরো থেকে বের হচ্ছিল পেলের মরদেহ। ২০ লাখের বেশি লোক তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সেখানে। তারপর শতবর্ষী মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মঙ্গলবার ১৪ তলা বিশিষ্ট বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সমাধিস্থল মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকায় ফুটবলের রাজা চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। নবনির্বাচিত ব্রাজিরিয়ান প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডা সিলভাও তাকে সম্মান জানান।
সান্তোসে দাফন করা হয় পেলেকে, যেখানে তিনি বেড়ে উঠেছেন। হয়েছেন ফুটবলের রাজা। যারা সান্তোসের ভক্ত নন, তারাও এসেছিলেন ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ডকে শ্রদ্ধা জানাতে। ১৭ বছর বয়সী জিওভানা সারমেন্তো তাকে দেখার জন্য তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটি তার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল, যার গায়ে ছিল পেলের নামধারী ব্রাজিলের জার্সি। তিনি বলেন, ‘আমি সান্তোসের ভক্ত নই, এমনকি আমার বাবও নয়। কিন্তু এই লোকটি ব্রাজিলের জাতীয় দলকে নতুন করে তুলে ধরেছেন। তিনি সান্তোসকে শক্তিশালী ও বড় করেছেন। কীভাবে আপনি তাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে থাকতে পারেন। তিনি অন্যতম সেরা একজন, আমাদের তাকে সম্মান জানানো প্রয়োজন।’
পেলের শবদেহ রাস্তায় বের করা হলে লাখ লাখ মানুষ দূর থেকে তার জন্য হাত তুলে প্রার্থনা করতে থাকেন। সবার চোখেই ছিল অশ্রু। তাদের মধ্যে ছিলেন এমন অনেক অল্পবয়সী ভক্ত, যারা জীবনে পেলেকে দেখেননি। সান্তোসের সবুজ গালিচায় দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শুরু হয় পেলের শবযাত্রা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার পর শুরু হয় তার অন্তিমযাত্রা। পেলের কফিনের সামনে ও পেছনে ছিল পুলিশের গাড়ি, চারপাশে ছিল মোটারসাইকেলও।
সান্তোসের স্টেডিয়াম ভিলা বেলমিরো থেকে সমাধিস্থল মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকার পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাজার হাজার ভক্ত-অনুরাগী। তার শেষবারের মতো বিদায় জানান ফুটবলের রাজাকে। ভিলা বেলমিরো থেকে শবযাত্রা যায় ক্যানাল-৬ সড়ক দিয়ে। সেখানে পেলের শতবর্ষী মা থাকেন। শেষবারের মতো ছেলেকে দেখেন এবং বিদায় জানান তার শয্যাশায়ী মা সেলেস্তে আরানতেস।
ব্রাজিলিয়ান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক গিলমার মেন্দেস ছিলেন এই অন্তিমযাত্রায়। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখের মুহূর্ত। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এই দেশের কাছে এই লিজেন্ডারি খেলোয়াড় কতটা অমূল্য ছিলেন।’ মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পেলের মরদেহ যায় সবচেয়ে উঁচু সমাধিস্থল মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখানেই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পেলেকে সমাহিত করা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হন পেলে। মেডিক্যাল সেন্টার জানায়, ক্যানসারের কারণে বেশ কিছু অর্গ্যান কাজ করছিল না তার। সবশেষ এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি।