দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : একে একে বিদায় নিয়েছেন ফুটবল আকাশের নক্ষত্র নেইমার ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এখনও জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে জ্বলছেন লিওনেল মেসি। বিশ্বের সেরা ফুটবলার হওয়ার বিতর্কে ইতি টানতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ জিততে হবে। প্রথম বাধা লুকা মদরিচকে নিয়ে গড়া অপ্রতিরোধ্য ক্রোয়েশিয়া, যারা গতবার ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছে। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে সেই আক্ষেপ পূরণের প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিতভাবে তাদেরও আছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ব্লকবাস্টার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া।
দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলের বিব্রতকর হারের পর গ্রুপের শেষ ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নকআউটে। ওই চাপ সামলে নিয়ে তারা গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে। সেখানে অস্ট্রেলিয়া বাধা পেরিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে টাইব্রেকারে জিতেছে আলবিসেলেস্তেরা।
সামনে থেকে অধিনায়কত্ব করছেন মেসি। প্রতিপক্ষের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে পাঁচ ম্যাচে করেছেন চার গোল এবং দুটি অ্যাসিস্ট। পোল্যান্ডের গোলকিপার উজচেখ শেসনি পেনাল্টি না ঠেকালে হতো পাঁচ গোল। যেমন সুন্দর গোল করছেন, তেমনই বানিয়ে দিয়েছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। তবে শুধু তাকে আটকানোর ছক কষছে না ক্রোয়েশিয়া। দলের স্ট্রাইকার ব্রুনো পেতকোভিচ রোববার সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘মেসিকে থামানোর জন্য এখনও আমাদের নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই এবং সাধারণত আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়ের চেয়ে পুরো দলকে থামিয়ে রাখার কথা ভাবি।’তার জন্য আলাদা করে ‘ম্যান মার্কিং’ রাখার কথা চিন্তা করছে না দল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাজিলের বিপক্ষে সমতা ফেরানো গোল করা এই ফরোয়ার্ড, ‘আমরা একটি দল হিসেবে তাদের থামাতে চেষ্টা করবো, ম্যান মার্কিং দিয়ে নয়। আর্জেন্টিনা শুধু মেসি নয়, তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড় আছে। আমাদের পুরো আর্জেন্টিনা দলকে নিশ্চল করে দিতে হবে।’
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারা আর্জেন্টিনা চার বছর পর রাশিয়াতেও ভালো কিছু করার প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র ও ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হার তাদের বড় ধাক্কা দেয়। শেষ পর্যন্ত গ্রুপের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে বাঁচা মরার দৌড়ে টিকে যায়। তবে ক্রোটদের কাছে হারের আঘাত বেশ ভালোই লেগেছিল তাদের, শেষ ষোলোতে হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে।
গোলপোস্টে ডমিনিক লিভাকোভিচ এরই মধ্যে জাপান ও ব্রাজিলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে পরীক্ষা দিয়ে উতরে গেছেন। মাঝমাঠে আছেন এই বিশ্বকাপের সেরা তিন মিডফিল্ডার- মদরিচ, মাতেও কোভাচিচ ও মার্সেলো ব্রোজোভিচ। নকআউটে দুর্দান্ত ক্রোটদের থামানোর কৌশল প্রয়োগ করার হুমকি দিয়ে রাখলেন স্কালোনি, ‘তারা অনেক দলকে বিপদে ফেলেছে। আমি কোনও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় কিংবা তাদের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতার কথা উল্লেখ করবো না। কিন্তু আমরা বিশ্লেষণ করেছি কোথায় তাদের আঘাত করা যায়। কখনও কখনও এটা কাজ করবে, আবার কখনও কখনও করবে না।’
টানা দ্বিতীয় ফাইনালে উঠতে জীবন দিয়ে লড়তে চান মদরিচ, ‘আর্জেন্টিনা একটি বড় দল। আমরা চেষ্টা করবো টুর্নামেন্টের সেরা খেলা খেলতে, এটি আমাদের জীবনের ম্যাচ। আমি করি এটা যথেষ্ট হবে ফাইনালে যাওয়ার জন্য।’ এই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিসেবে অভিহিত করেছেন ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ, ‘গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল সর্বকালের সেরা, ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটি থাকবে দুই নম্বরে। কাল যদি আমরা জিতে তাহলে এটা হবে ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরা ঐতিহাসিক ম্যাচ।’