দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দুর্নীতির মামলায় তার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে হেরে গেছেন। ফ্রান্সের আপিল আদালত দুর্নীতি ও প্রভাব খাটানোর দায়ে তার তিন বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন। প্যারিসের আপিল আদালত বুধবার এ রায় দেন। ফ্রান্সে ৬৮ বছর বয়সী সারকোজিই প্রথম কোনো সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট, যাকে কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
তবে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, সারকোজিকে হাজতবাস করতে হবে না। তিনি বাসাতেই থাকতে পারবেন। কিন্তু এক বছর তাকে সব সময় বন্দিদের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ট্যাগ হাতে পরে থাকতে হবে। এ ছাড়াও তার ওপর তিন বছরের জন্য কোনো রকম সরকারি পদ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সারকোজিকে ২০২১ সালে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, এর মধ্যে তাকে দুই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রভাব খাটানো এবং পেশাগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। সাবেক এই ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একটি আইনি তদন্ত সম্পর্কে গোপনে তথ্য বের করতে প্রভাব খাটিয়ে ২০১৪ সালে এক বিচারপতির সঙ্গে গোপন টেলিফোন লাইনে যোগোযোগ করেন এবং ঘুষের বিনিময়ে তাকে উচ্চপদ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন—এই অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
সারকোজিকে ২০২১ সালে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে বিচারপতি ক্রিস্টিন মি তার রায়ে বলেন, এই রাজনীতিক ‘জানতেন তিনি যে কাজটা করছেন সেটা অন্যায়।’ তিনি আরো বলেন, সারকোজি এবং তার আইনজ্ঞের কার্যকলাপ ফ্রান্সের জনগণের কাছে ‘বিচারব্যবস্থার খুবই ন্যক্কারজনক একটা ভাবমূর্তি’ তুলে ধরেছে। আদালতের এই রায়ের পর সারকোজির আইনজীবী বলেছেন, ফ্রান্সের অন্যতম সর্বোচ্চ আদালতে তারা নতুন করে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করবেন। আইনজীবী জাকুলিন লাফঁ বলেন, ‘নিকোলাস সারকোজি নির্দোষ। এই মামলা শেষ পর্যন্ত লড়ব।’তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এটি তার মধ্যে একটি। সারকোজি কোনো রকম দুর্নীতি বা নীতিবিরুদ্ধ কাজের কথা অস্বীকার করেছেন।
ফ্রান্সে ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সারকোজি লিবিয়া সরকারের কাছে অবৈধভাবে তহবিল চেয়েছিলেন—এই অভিযোগে মামলা আনার জন্য কৌঁসুলিরা এ মাসের গোড়ার দিকে অনুরোধ জানান। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটই একমাত্র চূড়ান্ত রায় দিতে পারেন যে কোন অভিযোগে আদালতে মামলা নেওয়া যাবে। নিকোলাস সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এক মেয়াদে ফ্রান্সের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার শাসনামলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের মধ্যে মধ্য ডানপন্থী এই নেতা ফ্রান্সের অর্থনীতি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং তিনি কড়া অভিবাসন নীতি চালু করেছিলেন। সমালোচকরা তার নাম দিয়েছিলেন ‘ব্লিং-ব্লিং’। কারণ তার নেতৃত্বের ধরন ছিল অতিমাত্রায় কঠোর, তারকা প্রভাবিত এবং অতিরিক্ত সক্রিয়।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মডেল ও গায়িকা কার্লা ব্রুনির সঙ্গে তার প্রেম ও তাকে ২০০৮ সালে বিয়ে করার মধ্যে দিয়ে নিকোলাস সারকোজির তারকাপ্রীতি আরো প্রকট হয়ে ওঠে। ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে তিনি সোশ্যালিস্ট প্রার্থী ফ্রসোয়াঁ ওঁলাদের কাছে হেরে যান। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় একের পর এক বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগে তদন্ত। ২০১৭ সালে সারকোজি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্য ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ‘লে রিপাবলিসিয়ঁন্স’ প্রেসিডেন্ট পদে অন্য প্রার্থী নির্বাচিত করায় তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।