দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে সদ্যই দায়িত্ব নিয়েছেন জেনারেল আসিম মুনির। নতুন দায়িত্বে আসার কয়েক দিন পরই কাশ্মির সফর করেছেন তিনি। এসময় বিতর্কিত কাশ্মির অঞ্চলকে বিভক্তকারী লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) পরিদর্শন করার পাশাপাশি ভারতকে কার্যত হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন জেনারেল মুনির। শনিবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ভারতের জম্মু কাশ্মিরের সঙ্গে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরকে বিভক্তকারী এলওসি পরিদর্শন করেন পাকিস্তানের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান। এসময় তিনি বলেন, আক্রমণ হলে সেনাবাহিনী দেশকে রক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে- শনিবার কাশ্মিরের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) পরিদর্শন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতেই নয়, বরং আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলে শত্রুকে কঠোর জবাব দিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সবসময়ই প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় রাষ্ট্র (পাকিস্তানে) কখনোই তার ঘৃণ্য পরিকল্পনা অর্জন করতে সক্ষম হবে না।’অবশ্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই হুঁশিয়ারির জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আল জাজিরা বলছে, পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিন পর জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মিরে এই সফর করলেন। অবশ্য পাকিস্তানশাসিত আজাদ কাশ্মিরকে ভারত নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বলেছিলেন, পাকিস্তানের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গিলগিট-বালতিস্তানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত নয়াদিল্লি। ভারতের দাবি, গিলগিট-বালতিস্তান (ভারতশাসিত) কাশ্মিরের অংশ এবং এটি অবৈধভাবে পাকিস্তানের দখলে রয়েছে।
রাজনাথ সিংয়ের সেই বক্তব্যকে ইসলামাবাদ সেসময় ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছিল। পাকিস্তান সেসময় জানায়, রাজনাথের ওই বক্তব্য প্রতিবেশীর (পাকিস্তানের) প্রতি নয়াদিল্লির শত্রুতাপূর্ণ এবং সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দু’টি দেশ বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
উল্লেখ্য, কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।
উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়। অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান – কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়। সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন – এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।