দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত পাইলটদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং দেশপ্রেম দেখানোর জন্য জাতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ থেকেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, ওয়াগনার গ্রুপ শনিবার মস্কোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় লড়াইয়ে রাশিয়ার বৈমানিকরা নিহত হয়েছেন।
সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন প্রথমবারের মতো মিলিশিয়া বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে হওয়া ওই বিদ্রোহ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন। তার মন্তব্য নিশ্চিত করছে, ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার বিমান ভূপাতিত করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা এমন প্রতিবেদনগুলোও সঠিক। এদিকে মাতৃভূমি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য রাশিয়ার জনগণ, সেনাকর্মী, আইন প্রয়োগকারী এবং সুরক্ষা পরিষেবাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুতিন বলেছেন, এটা প্রমাণ করছে, রাশিয়া কোনো ধরনের ব্ল্যাকমেইল এবং অভ্যন্তরীণ অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টার কাছে নতি স্বীকার করবে না। তিনি বলেন, রাশিয়ার শত্রুরা দেশকে ‘রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে দমবন্ধ’ অবস্থায় দেখতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ‘নিহত বীর পাইলটদের সাহস এবং আত্মত্যাগ রাশিয়াকে মর্মান্তিক ও ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচিয়েছে। বিদ্রোহ রাশিয়ার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং এর পেছনে যারা রয়েছে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। কতজন পাইলট মারা গেছেন বা কয়টি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছু রাশিয়ান টেলিগ্রাম চ্যানেল রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। এর মধ্যে আছে ব্লগ রাইবার, যেটির এক মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। শনিবার তারা প্রতিবেদন করেছে, দিনব্যাপী বিদ্রোহে ১৩ জন রাশিয়ান পাইলট নিহত হয়েছেন।
বিধ্বস্ত বিমানের মধ্যে তিনটি ‘এমআই-৮ এমটিপিআর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার’ হেলিকপ্টার এবং ক্রুসহ একটি ‘আইএল-১৮’ বিমান ছিল বলে রাইবার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। কোন পরিস্থিতিতে বিমানটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং পাইলটদের হত্যা করা হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। পুতিন বলেছেন, বিদ্রোহের নেতারা একটি অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল। তারা দেশকে বিভক্ত এবং দুর্বল করার চেষ্টা করেছে।
যা এখন দেশকে বিশাল একটি হুমকি এবং অভ্যন্তরীণ চাপের মুখোমুখি নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিদ্রোহের সংগঠকরা তাদের নেতৃত্বে থাকা সৈন্যদের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। পুতিন বলেন, তারা তাদের মিথ্যা বলেছে। তারা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে আগুনের নিচে, নিজেদের গুলি করার জন্য। রাশিয়ার শত্রুরা ভ্রাতৃহত্যা করতে চেয়েছিল। বিদ্রোহের সময় রক্তপাত এড়াতে, আমার প্রত্যক্ষ নির্দেশে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান পুতিন। যার কারণে হঠাৎ করে, ওয়াগনার বাহিনী নেমে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্রোহ শেষ হয় এবং প্রিগোজিন প্রতিবেশী বেলারুশে নির্বাসনে যেতে রাজি হন।
পুতিন আরো বলেন, ‘যারা ভুল করেছে তাদের জন্য সময় প্রয়োজন সচেতন হওয়ার জন্য। তাদের বুঝতে হবে, তাদের এ ধরনের কাজ সমাজ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যে দুঃসাহসিক কাজটি করেছে তা আমাদের রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক এবং ধ্বংসাত্মক ছিল।’
ওয়াগনার নেতা প্রিগোজিন তার প্রেস সার্ভিসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ১১ মিনিটের অডিও বার্তায় কথা বলেছেন এবং তার অবস্থান বা চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। যার কারণে, তিনি মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করেন। তিনি বলেছিলেন তার সেনারা হেলিকপ্টারগুলোকে গুলি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। হেলিকপ্টারগুলো তাদের আক্রমণ করেছিল, যখন তারা দক্ষিণ থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার (৫০০ মাইল) দূরে রাজধানীতে যেতে চেয়েছিল। সেটা হঠাৎ করে বিদ্রোহ বন্ধ করার আগে।
প্রিগোজিনের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে একটি ছিল রাশিয়ার শীর্ষ জেনারেল শোইগুকে বরখাস্ত করা, যিনি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহের পর থেকে জনসমক্ষে আর উপস্থিত হননি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি সপ্তাহান্তে ওয়াগনার বাহিনীকে বেলারুশে স্থানান্তরিত করতে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করবেন। পুতিন ওয়াগনার যোদ্ধা এবং কমান্ডারদের ধন্যবাদ জানান রক্তপাত এড়ানোর জন্য। তিনি এটাও বলেন, ওয়াগনারের বেশির ভাগ সদস্য দেশপ্রেমিক ছিলেন। তবে তিনি প্রিগোজিনের কোনো কথা উল্লেখ করেননি।