দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাঝে কোনও বৈঠক হবে না।
যদিও উভয় নেতাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি ও সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে না। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের দাবি, এই মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করবে এই আশায় ঢাকা এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহী।
তারা বলেছেন, এ ধরনের বৈঠক ভারতের এজেন্ডার অংশ নয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মোদির তিন দিনের সফর ব্যস্ত সময়সূচীতে পরিপূর্ণ থাকবে। মোদি আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সফরে দেশটিতে যাবেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা করার পাশাপাশি চতুর্দেশীয় জোট ‘কোয়াড’-এর শীর্ষবৈঠক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়দের সভায় তিনি যোগ দেবেন বলে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে না তার।
ভারতীয় এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের সাথে কোনও বৈঠক তার শিডিউলে নেই।’
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্য এবং ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের প্রায় প্রতিদিনের মন্তব্যে ভারতের সমালোচনা নয়াদিল্লির ভালো লাগেনি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারতে নির্বাসনে থাকাকালীন বাংলাদেশের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন, হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য সকল রাজনৈতিক দলই “ইসলামপন্থি”, এমন বয়ানের বাইরে যাওয়া উচিত ভারতের।
অবশ্য নয়াদিল্লি বলেছে, হাসিনাকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাসিনা ভারতে অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনার প্রত্যর্পণের নিয়ে সম্ভাব্য বাংলাদেশি অনুরোধের বিষয়েও কথা বলতে অস্বীকার করেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে কথা বললে ভারতকে এমন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেটি তারা এখন আলোচনায় রাখতে চাইবে না।”
তিনি আরও বলেছেন, “এরমধ্যে প্রধান বিষয় হলো ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান। বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের কিছু নেতার গভীর সম্পর্ক থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে তারা তাকে ফেরত দিতে চায় না।”
তিনি বলেন, “যদি মোদিকে এখন ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আলোচনা না করে থাকতে পারবেন না তিনি।”
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল জানায়, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।