দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : দেশের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা ‘আদর্শকে’ আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল বরাদ্দ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৫৯ বিশিষ্টজন। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) আদর্শ প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকাশক মাহাবুব রাহমান ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশনাটির স্টল বরাদ্দ স্থগিত করে রাখা হয়েছে। মাহাবুব রাহমান মনে করছেন, ভিন্নমত প্রকাশে বাধা দিতেই এই হীন চেষ্টা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদর্শ থেকে ইতোমধ্যে ৬ শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৩শ’র অধিক লেখক। আদর্শ থেকে প্রকাশিত ৬০০ বইয়ের মধ্য ৩টি বইয়ের বিরুদ্ধে ভিন্নমতের অভিযোগ এনে আদর্শকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আসন্ন বইমেলায় অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে দেশের ৫৯ বিশিষ্টজন বলেন, বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের মূলনীতি ছিল; মানবিক মর্যাদা, আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রাষ্ট্র দেবে। সেক্ষেত্রে একজন লেখকের বইয়ে তার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, আদর্শ প্রকাশনাকে তিনটি বইয়ের উল্লেখ করে বইমেলায় অংশগ্রহণের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এটা বাক-স্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি একই সঙ্গে আইনের শাসনের প্রতিও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
তারা বলেন, কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে আদর্শ প্রকাশনাকে বইমেলায় অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বাংলা একাডেমিকে বলা হয় ‘বাঙালির মেধা ও মননের প্রতীক’। সেই বাংলা একাডেমি কেন নিজেদের দলীয়করণের সুযোগ দেবে? আমরা দ্রুত আদর্শকে বইমেলায় প্রাপ্য অনুযায়ী স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, প্রকাশকের স্বাধীনতা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে, তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানাই।
বিবৃতিতে সই করা দেশের ৫৯ বিশিষ্টজন হচ্ছেন
লেখক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নারীনেত্রী ফরিদা আকতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ড. আসিফ নজরুল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রোবায়েত ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস, লেখক ও সংগঠক মুনির হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দীন, বেলার নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান, লেখক ও প্রকৌশলী চমক হাসান, লেখক ও অধ্যাপক রাগিব হাসান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন, প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ, লেখক ও সংগঠক ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন, শিক্ষক মোহাম্মদ আজম, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মারুফ মল্লিক, লেখক রাখাল রাহা, প্রকাশক মেসবাহউদ্দিন, লেখক ও রাজনীতিবিদ ড. জাহেদ উর রহমান, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক বাকি বিল্লাহ, লেখক ও প্রকাশক নাজিম উদ্দিন, কবি ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ, নির্মাতা তাসমিয়া আফরিন মৌ, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, গবেষক সাইমুম পারভেজ, লেখক ও সাংবাদিক শিবলী আহমেদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুতাসিম বিল্লাহ, লেখক ও সাংবাদিক সোহেল রানা, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের আহবায়ক জাফর মাহমুদ, কবি ও হালখাতা সম্পাদক শওকত হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, লেখক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী রোজীনা বেগম, শিক্ষক খোরশেদ আলম, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী নুসরাত জাহান, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, গবেষক ও শিক্ষক ড. রহমত উল্লাহ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট আরিফুল ইসলাম আদীব, লেখক ড. হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট মাহা মির্জা, প্রকাশক নূর মোহাম্মাদ আবু তাহের, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, লেখক ও গবেষক ড. একরাম উদ্দীন সুমন, সাংবাদিক তন্ময় ইমরান এবং লেখক ও প্রকাশক শামীম রেজায়ী।