দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : মহানবী (সা.) যখন ৪০ বছরে পদার্পণ করেন, তখন তিনি ক্রমান্বয়ে নির্জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে মক্কা নগরী থেকে দুই মাইল দূরত্বে অবস্থিত হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতে লাগলেন। খাদিজা (রা.) কখনো কখনো তাঁর সঙ্গী হতেন। তাঁর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। কাবাগৃহ থেকে প্রায় ছয় কিমি উত্তর-পূর্বে হেরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই গুহার দৈর্ঘ্য চার গজ এবং প্রস্থ পৌনে দুই গজ। কখনো কখনো সেখানে তিনি টানা কয়েক দিন কাটাতেন। এভাবে চলল প্রায় ছয় মাস। আর চলে এলো রমজান। পুরো রমজান রাসুলুল্লাহ (সা.) হেরা গুহায় অবস্থান করে ইবাদতে লিপ্ত থাকেন। এই নির্জন ধ্যানমগ্নতায় ছিল তিনটি ইবাদত। (১) নির্জনবাস (২) আল্লাহর ইবাদত এবং (৩) সেখান থেকে কাবাগৃহ দেখতে পাওয়া। ইবন ইসহাক বলেন, ‘এভাবে নিঃসঙ্গ ইবাদত জাহেলিয়াতের রীতি ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জাতি আগে থেকেই যেমন আশুরার রোজা পালন করত, তেমনি হেরা গুহায় নিঃসঙ্গ ইবাদত করত। আব্দুল মুত্তালিব এটি প্রথম করেন। বরং এটি ছিল ইবরাহিমি ইবাদতের অবশিষ্টাংশ। (সিরাহ সহিহাহ ১/১২৩-টীকা)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হেরা গুহায় ধ্যানমগ্নতা থেকে মুসলমানদের নিঃসঙ্গ ইবাদতের ধারণা পাওয়া যায়। ইসলামের পরিভাষায় এটাকে মুরাকাবা বলা হয়।
মুরাকাবার শাব্দিক অর্থ সঙ্গী হওয়া। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) লেখেন, ‘মুরাকাবা হলো এই বিষয়ে বান্দার সার্বক্ষণিক জ্ঞান ও বিশ্বাস যে তিনি তার ভেতর ও বাহির সম্পর্কে অবগত। বান্দার এই জ্ঞান ও বিশ্বাস তার অন্য একটি জ্ঞানের প্রতিফল। তা হলো—আল্লাহ তার সঙ্গী, তিনি তাকে দেখেন, তার কথা শোনেন, তার প্রতি মুহূর্তের কাজ সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। ’ (মাদারিজুস সালিক : ২/১৪৮৯) মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন—তোমরা যেখানেই থাক। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ৪)
তাই ‘মুরাকাবা’ হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তি কর্তৃক তার ‘নফস’কে আল্লাহর পর্যবেক্ষণে নিয়ে যাওয়া এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাকে সেভাবে নিয়োজিত রাখা, এমনকি তার ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা অর্জিত হওয়া এমনভাবে যে আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে পূর্ণ অবগত, তিনি তার গোপন বিষয় জানেন, তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, তাকে তত্ত্বাবধান করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় করো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৫)
সুফি সাধক আলেমরা আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস দ্বারা মুরাকাবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্তর নির্ধারণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে (মনে করবে) তিনি তোমাকে দেখছেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০)
তাঁরা বলেন, প্রথম অবস্থাটি মুরাকাবার সর্বোচ্চ স্তর এবং দ্বিতীয় অবস্থাটি মুরাকাবার সর্বনিম্ন স্তর। এর মধ্যবর্তী অনুভূতির একাধিক স্তর আছে।