দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : মাত্র ৯ সেকেন্ডেই ভেঙে পড়লো বহুতল ভবন। ভারতের উত্তরপ্রদেশের নয়ডার ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ এখন অতীত। স্থানীয় সময় রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বিস্ফোরক দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় এই যমজ অট্টালিকা। গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জোড়া এই বহুতল ভবনের বিভিন্ন টাওয়ারে ভর্তি করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক। তা দিয়েই উড়িয়ে দেওয়া হয় অ্যাপেক্স এবং সিয়েন সুপারটেকের দুই ভবন। জোড়া বহুতল ভবন ভাঙার মুহূর্তের ভিডিওতে মাত্র ৯ সেকেন্ডের মধ্যেই অ্যাপেক্সের ৩২ তলার সঙ্গে মাটিতে মিশে যেতে দেখা যায় সিয়েনের ২৯ তলা ভবন। এই দুই ভবনে মোট এক হাজার ফ্ল্যাট ছিল।
এনডিটিভি বলছে, টাওয়ার দুটিতে ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। ভবন দুটির সব পিলারে প্রায় ৭ হাজার গর্ত করে বিস্ফোরক ঢোকানো হয়। এর পাশাপাশি এটি যাতে মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশে যায় সেজন্য ২০ হাজার সার্কিট বসানো হয়। বহুতল এই দুই ভবন যাতে সরাসরি নিচের দিকেই ভেঙে পড়ে সেটি নিশ্চিত করার জন্য ‘জলপ্রপাত কৌশল’ অনুযায়ী বিস্ফোরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
রোববার সকালের দিকে ওই এলাকার ৭ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। বহুল আলোচিত এই টাওয়ার ভবন ধ্বংসের আগে আশপাশে সব ভবনের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে ওই এলাকায় গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংযোগ পুনরায় চালু হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এলাকার বাসিন্দারা ফিরতে পারবেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। এলাকায় ফেরার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাসিন্দাদের বাসার ভেতরেও মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
ভারতীয় ১০০ কোটি রুপি ইন্সুরেন্সের আওতায় ভবন দুটির ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে। আশপাশের কোনও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই অর্থ থেকে সেগুলো মেরামত করে দেওয়ার নির্দেশ ছিল আদালতের। ভবন ধ্বংসের পুরো ব্যয় সুপারটেককে বহন করতে হয়েছে। এই কাজে ২০ কোটি রুপির কিছু বেশি ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুম্বাই-ভিত্তিক কোম্পানি এডিফিস ইঞ্জিনিয়ারিং টাওয়ার দুটি ভেঙে ফেলার দায়িত্ব পেয়েছিল।
গত বছরের আগস্টে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দুটি ভবনের মধ্যে ন্যূনতম জায়গা ছাড় না রাখার অভিযোগে টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশ আবাসন আইন অনুসারে ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়াই বেআইনিভাবে ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বেআইনি কাজের জন্য নয়ডা কর্তৃপক্ষ এবং সুপারটেকের মধ্যে আঁতাত তৈরি হয় বলেও রায়ে মন্তব্য করেন আদালত।
পরে ভবন দুটির ফ্ল্যাট মালিকদের অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, ২০২২ সালের মে মাসে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা হবে। পরে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। কিন্তু টেকনিক্যাল জটিলতা এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছিল।