1. bazmedialink7@gmail.com : Baz Alam : Baz Alam
  2. mdkaif01133@gmail.com : md :
  3. talhanrcc2014@gmail.com : Talha : MD TALHA
  4. deshbidesh2022@gmail.com : Tuhin Ahmed : Tuhin Ahmed
কেরানীগঞ্জে জমজমাট মাদক ব্যবসা... - DeshBideshNews
November 26, 2024, 8:22 pm
 

কেরানীগঞ্জে জমজমাট মাদক ব্যবসা…

  • Update Time : Tuesday, August 16, 2022
  • 298 Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর এলাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের ইকুরিয়া জেলেপাড়ার শেষ মাথার ঘিঞ্জি এলাকা। কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। পানির বোতল হাতে এক যুবক এসে দাঁড়ালেন। ডানে বাঁয়ে তাকালেন। একটু পরেই গলির ভেতর থেকে দুই যুবক এসে তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন, সড়ক থেকে খানিক দূরে মাটি ফেলে টিলার মতো উঁচু জায়গায় এক নির্মাণাধীন বাড়ির দিকে। সেখানে তাঁর হাতে কাগজে মোড়ানো দুটি পোঁটলা দেওয়া হলো। এগুলো নিয়ে যুবকটি ফিরে আসেন।

এর প্রায় চার মিনিট পর সুজুকি মোটরসাইকেলে করে আসেন তিন যুবক। পেছনে বসা যুবকের হাতেও ছিল একটি পানির বোতল। চালক কয়েকবার হর্ন বাজাতেই আগের সেই দুই যুবক এসে এই তিনজনকে নিয়ে গেলেন জেলেপাড়ার ভেতরের এক টিনের ছাপরা বাড়িতে। মোটরসাইকেলটি রইল পথের পাশে। মিনিট দশেক পরে তাঁরা সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে ফিরে এলেন। চলে গেলেন মোটরসাইকেলের ভ্রুম ভ্রুম আওয়াজ তুলে।

জেলেপাড়া মোড়ে দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দেখা গেল, কিছুক্ষণ পরপর সেখানে কেউ একা বা দু’তিনজন বা ছয় সাতজনের একেকটি দল আসছিল। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এখানে জেলেপাড়া ও সংলগ্ন টিলাপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে তাঁরা মাদক কিনে নিয়ে বা সেখানেই সেবন করে ফিরে যাচ্ছিলেন। এলাকাটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পেছনে, এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে।

টিলাপাড়া এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা জেলেপাড়া ও টিলাপাড়া এলাকার এসে জড়ো হন। টিনশেডের বাড়িতে মাদক সেবনের আড্ডা বসে। অন্য বাড়ি থেকে মাদক বিক্রি করা হয়। অনেক দূরের এলাকা থেকেও মোটরসাইকেলে করে মাদকসেবীরা এখানে মাদক কিনতে আসেন। সেবন করেন অন্যত্র। মাঝেমধ্যে পুলিশ টহল দিতে আসে বটে, তবে আশপাশে মাদক বিক্রেতাদের লোক থাকেন। পুলিশ দেখলেই তাঁরা মুঠোফোনে বিক্রেতাদের সাবধান করে দেন। সবাই কিছুক্ষণের জন্য গা ঢাকা দেন। পুলিশ চলে গেলে অবস্থা আবার আগের মতোই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- জেলেপাড়া, টিলাপাড়া, বেয়ারা, ইকুরিয়া- এসব এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন জরিপ হোসেন ওরফে কালা জরিপ। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। জরিপ ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িত। বিষয়টি সবাই জানেন কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। জরিপের বিরুদ্ধে হত্যা, নারী নির্যাতন, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে আবার আগের মতোই মাদক ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশত জায়গায় দেদার মাদক কেনাবেচা চলছে। অনেক স্পটে মাদক সেবনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। একেক এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রেতা ও সেবীদের জন্য একেক রকমের সংকেত ব্যবহার করে থাকেন।

কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার হাসনাবাদ এলাকায় নতুন গড়ে ওঠা আবাসনের নির্মাণাধীন ভবনগুলো এখন মাদক কেনাবেচার বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেল- বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পের শেষ প্রান্ত এবং হাসনাবাদ হাউজিং প্রকল্পের শেষ প্রান্তের মাঝখানে মাঠের মতো বেশ খানিকটা খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে নির্মাণসামগ্রী রাখা। কয়েকটি চায়ের দোকানও গড়ে উঠেছে।

চারপাশে বহু নির্মাণাধীন বহুতল ভবন। এখানে মাদক ক্রেতা ও সেবীরা এসে বিশেষ ভঙ্গিতে মাথা বা কাঁধ চুলকাতে থাকেন। এরপর কোনো একটি ভবন থেকে বাঁশি বেজে ওঠে। ক্রেতারা মাদক কিনতে সেই বাড়ির দিকে চলে যান। এখানে বিক্রেতাদের সাধারণত প্রকাশ্যে দেখা যায় না। তাঁরা নির্মাণাধীন ভবনগুলোর কক্ষে অবস্থান করে খালি জায়গাটির দিকে নজর রাখেন।

জানা গেল- এ এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন শরিফ মিয়া ও আল আমিন। এঁদের একটি সংঘবদ্ধ দল আছে। এঁরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও এলাকার প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সে কারণে তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। এলাকাবাসীও ভয়ে কিছু বলেন না।

কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মাদক বিক্রি বেশি হয় জিনজিরা এলাকায়। এখানে বড় ঘাঁটি রয়েছে রহমতপুর টাওয়ার ঘাট, হাফেজ সাহেব ঘাট, রসুলপুর পাকা ঘাট, মান্দাইল খালেরঘাট, সেন্টু, বেড়িবাঁধ এলাকায়। এ ছাড়া তারানগর, বেউতা, কলমারচর, বটতলী ও শাক্তা ইউনিয়নের জিয়ানগর, নবাবচর এলাকায় সারা দিনে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা হয়।

মীরেরবাগ বালুর মাঠ এলাকার পিন্টু; ইকুরিয়া জেলেপাড়ার লিপু মিয়া, আল আমিন ও তাঁর বোন সাবিহা বেগম; ইকুরিয়া খালপাড় এলাকায় শুভ ও বেলাল; ইকুরিয়া পূর্ব পাড়ায় আল আমিন ও আজিম; ইকুরিয়া টিলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক এলাকায় আল আমিন; বেয়ারা মুসলিমনগর এলাকার হাবিবুল্লাহ এবং মীরেরবাগ বালুরচর এলাকায় মো. বাপ্পি, শরীফ মিয়া ও হযরত আলী অনেক দিন থেকে মাদক ব্যবসায় জড়িত। কেউ কেউ ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এঁদের অনেকের নামেই থানায় মামলা রয়েছে।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ