নীলফামারী থেকে সফিকুল ইসলাম : নীলফামারীর জলঢাকায় বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর গত ৫০ বছরেও নির্মিত হয়নি সেতু। ফলে নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে ভাঙা গড়ার মাধ্যমে গড়ে উঠা জনপদকে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে উৎপাদিত পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভোগান্তির কমতি থাকে না। সেতুর অভাবে মাথায় ও ঘাড়ে করে সাঁকো পারাপার করতে হচ্ছে।
এদিকে একটি সেতুর অভাবে ওই এলাকার মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেতু নির্মাণে কয়েকদফা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও নানা জটিলতায় আটকে গেছে।
স্থানীয় সরকার ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়- গত বছর সেতুটি নির্মাণে প্রস্তাবনা আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে বুয়েটের স্পেশালাইজড টিম ফিজিবিলিটি যাচাইয়ের জন্য এসেছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো রিপোর্ট পায়নি সংশ্লিষ্ট দফতর। সেতুটি নির্মাণ হলে জলঢাকা উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক জোন হিসেবে পরিণত হবে এলাকাটি।
সেতুটির অভাবে স্বাস্থ্য চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ পথ হেঁটে কিংবা মুমূর্ষু রোগীদের কাঁধে করে এনে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে তাদের। বর্ষাকালে এ দুর্ভোগ আরও চরম আকার ধারণ করে। কোমলমতি শিশুরা নৌকা পাড়ি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসে স্কুল কলেজে।
সরেজমিন মনছারের ঘাট এলাকায় আলসিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন- যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় উপজেলা সদরে যেতে অনেক কষ্ট হয়। বন্যায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়ে যায় আরও বেশি। অথচ বুড়িতিস্তা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলেই এ দুর্ভোগ থেকে আমরা রক্ষা পাব।
ডাউয়াবাড়ি চরভরট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মজিদের বলেন- সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই দুর্ভোগ। ভবিষ্যতে এ দুর্ভোগ দূর হবে বলে বিশ্বাস হয় না। ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান এমনকি এমপিও এসে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, কিন্তু বাস্তবায়ন আর হয় না। ফলে কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে ১০-১২ কিলোমিটার হেঁটে নেকবক্ত বাজারে এসে অটো অথবা রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন- বর্ষাকালে নৌকায় যাত্রী ভর্তি না হলে ছাড়ে না নৌকা। এতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। আমাদের এলাকার কৃষকরা অনেক আবাদ করে কিন্তু রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পাইকাররা এই এলাকায় আসে না। ফলে সঠিক দামটা পাই না।
নেকবক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী শাপলা আক্তার জানায়- আমাদের এই দিক দিয়ে স্কুল যেতে খুব সমস্যা হয়। বর্ষাকালে নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোতে টাকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। বর্ষাকালে অনেক সময় আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। আমি দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
ডাউয়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা অলিয়ার রহমান বলেন- হামার এটে (এখানে) পাইকার (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী) আইসে না (আসে না), যেইলা ফসল হামরা ফলাই কম দামে বেঁচেবার (বিক্রি) নাগে (লাগে)। সরকার যদি হামার (আমাদের) এলাকার মানুষের কষ্টগুলো দেখিল হ্যায় (দেখতো) তাহইলে একটা ব্রিজ বানে (তৈরি) দিলে হয়। তাইলে হামার গ্রামের মানুষগুলার খুব উপকার হইল হ্যায়।
জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন- ইতোমধ্যে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বুয়েটের স্পেশালাইজড টিম ফিজিবিলিটি যাচাইয়ের জন্য এসেছিল। সেটা ঠিকঠাক থাকলে আর মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দেয় তাহলে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও জলঢাকা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন- সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মহান সংসদে কয়েক দফা ব্রিজটি নির্মাণের তাগাদা দিয়েছিলাম। বর্তমান সরকারের তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছেও ব্রিজটি নির্মাণের দাবি করে করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।