নিজস্ব প্রতিনিধি : আন্তর্জতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম বলেছেন- বৃটেনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকসহ যারাই আমার জন্য প্রতিবাদ করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যখন আমি আক্রান্ত হই, তখন দেশের সব স্তরের মানুষের পাশাপাশি বৃটেনের বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। একইভাবে গত এক বছর চেনা, অচেনা যারা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, আমার জন্যে রাস্তায় নেমে বা সামাজিক মাধ্যমে একটি শব্দও উচ্চারণ করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। দুঃসহ দিনগুলোতে আমার ও আমার পরিবারের প্রতি যে সহমর্মিতা আপনারা দেখিয়েছেন আমি অভিভূত, আপ্লুত, কৃতজ্ঞ। এই ঋণ শোধ হবার নয়। আপনাদের বড়ত্বকে সম্মান জানাই, কুর্নিশ করি।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথাগুলো বলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।
গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে ক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ।
গত বছর পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সচিবালয়ের ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে শারিরীক ও মানসিকভাবে হেনস্থা এবং গ্রেফতারের পর দেশে বিদেশে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলেন। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব মানববন্ধন আয়োজন করে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবী জানায়- এ প্রসংগে রোজিনা ইসলাম বলেন- দেশ বিদেশের সাংবাদিকদের এমন সহযোগিতার জন্য আমি আজ আপনাদের সামনে। আমার জীবনে সকলের অবদান স্মরনীয় হয়ে থাকবে। দুর্নীতি বিরোধী সাংবাদিকতায় আমি কখনো ভয় পাই না। কারণ মৃত্যু তো একদিন আসবেই। সুতরাং সৎ সাংবাদিকতার মাধ্যমে জনকল্যাণে কাজ করে মারা গেলেও তাতে দুঃখের কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন- ২০ বছর বয়স থেকেই সাংবাদিকতা করছি। আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোস করিনি। আমি এভাবেই সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবো।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার শুরুতে প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যূতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং অনুষ্ঠানটি সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিবেদিত করা হয়।
প্রাণবন্ত আলোচনায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন- গুড জার্নালিজম অর্থাৎ ভালো সাংবাদিকতার জন্যই সেদিন সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষও আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আসলে ভালো সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ মে রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিবের পিএ’র কার্যালয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে শারিরীক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয় । এরপর বৃটিশদের তৈরি সেই একশ বছরের পুরোনো ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যক্ট’ আইনের আওতায় গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিজন ভ্যানে একাকী তাঁকে কমপক্ষে ছয়ঘণ্টা থাকতে হয়। তাঁর জীবনে এটি ছিলো খুব কঠিন একটি সময়। এরপর তাঁকে জেলে পাঠানো হয় । তিনি কারাগারের জীবনকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান। নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ৫ দিন জেলে বন্দী রাখার পর তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত তিনি জামিনেই আছেন। কিছুদিন পরপর আদালতে হাজির হতে হয় । গ্রেফতারের এক বছর পূর্ণ হলেও তিনি মামলা থেকে পুরোপরি খালাস পাচ্ছেন না । তাঁর এক্রেডিটেশন কার্ড ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষে। ছয়মাস পর পাসপোর্টটি ফেরত দিতে হয়। অন্যদিকে ঘটনার দিন যারা রোজিনা ইসলামকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করেছেন তাদের কোনো বিচার হয়নি ।
মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা ওইদিন সচিবালয়ে যারা রোজিনাকে হেনস্থা করেছে তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।
প্রেসক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন- সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতায় যত প্রতিবন্ধকতা আসুক আমাদেরকে সেই চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। কারো হুমকি ধামকীকে ভয় পেলে সৎ সাংবাদিকতা হেরে যাবে।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ বলেন- রোজিনা ইসলাম সাহসী সাংবাদিকতা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
মতবিনিময় সভায় প্রশ্নোত্তরপর্বে বক্তব্য রাখেন বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রযোজক- সিনিয়র সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসাইন, লন্ডন বাংলাপ্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, লন্ডন বাংলাপ্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, স্পেকট্রাম রেডিও বাংলার উপস্থাপক মিছবাহ জামাল, দৈনিক প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি তাবারকুল ইসলাম পারভেজ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর, সাপ্তাহিক দেশ এর বার্তা সম্পাদক ফয়সল মাহমুদ ও প্রেসক্লাবের আজীন সদস্য মানিক মিয়া।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক কবি আব্দুল কাইয়ূম, এনটিভি ইউরোপের চীফ রিপোর্টার আকরামুল হোসাইন, ফটো সাংবাদিক জিআর সোহাইল, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি এমরান আহমদ, মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারি মোঃ আব্দুল হান্নান, ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা, নির্বাহী সদস্য নাজমুল হোসেন, সারওয়ার হোসাইন, সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী ও সাংবাদিক আব্দুল হান্নান- প্রমূখ।