দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যে হিন্দুদের একটি উৎসব উদযাপনকালে অন্তত ৪৬ জন ডুবে মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে ৩৭টি শিশুও রয়েছে। পাশাপাশি এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিহারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ফুলে ওঠা নদী ও পুকুরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল করার সময় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এসব মৃত্যু ঘটে। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘মানুষজন নদী ও পুকুরের পানির বিপজ্জনক স্তর উপেক্ষা করে এই উৎসব উদযাপনের জন্য গোসল করতে নেমেছিল।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিহার রাজ্যের ১৫টি জেলায় মঙ্গলবার থেকে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় মানুষ তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনায় পালিত ‘জিতিয়া পর্ব’ উৎসব উদযাপন করছিল।
কর্তৃপক্ষ এখনো আরো তিনটি মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা জানান, রাজ্য সরকার প্রতিটি মৃতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে।
এএফপির তথ্য অনুসারে, ভারতে বড় ধর্মীয় উৎসবের সময়ে উপাসনাস্থলে মৃত্যুর ঘটনা নিয়মিত বিষয়। এসব উৎসবের সবচেয়ে বড়গুলোতে লাখ লাখ ভক্ত তীর্থযাত্রায় অংশ নেন। গত জুলাই মাসে উত্তর প্রদেশে হিন্দুদের ধর্মীয় সমাবেশে অতিরিক্ত ভিড়ে অন্তত ১১৬ জন পিষ্ট হয়ে মারা যায়, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
এ ছাড়া ভারত প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে প্রবল বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়। যদিও বর্ষা কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশটির লাখ লাখ কৃষকের জীবিকার উৎস। তবে একই সঙ্গে প্রতিবছর ভূমিধস ও বন্যার আকারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অংশে শত শত মানুষের মৃত্যুর কারণ। গত জুলাইয়ে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ভূমিধসে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পাশাপাশি ভারতের বাঁধ নির্মাণ, বন উজাড় ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মানবিক ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়িয়ে তুলছে। পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বর্ষার গতিবিধি ক্রমেই শক্তিশালী ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।