রাজা সায়মন : ‘আলোকিত প্রবাসী যারা’ তাদেরকে নিয়েই ‘দেশবিদেশ ডট নিউজ’র ধারাবাহীক আয়োজেন। আজকের অতিথী যুক্তরাজ্য প্রবাসী ড. মোহাম্মদ আলী (লাল্লিং)।
ড. মোহাম্মদ আলী লাল্লিং একজন বৃটিশ এবং বাংলাদেশী নাগরিক। তাঁর মা বাবা ছোটবেলা থেকেই চাইতেন যেন সন্তান বড় হয়ে মানুষের সেবা ও দেশের সেবা করতে পারে।
ড. মোহাম্মদ আলী (লাল্লিং) এর জন্ম কুমিল্লা জেলাধীন কোতয়ালী থানার অন্তঃগত বলরামপুর হালিমানগর (বড়বাড়ি), তাঁর পিতা মো: নুরুল আলম একজন স্বনামধন্য ঠিকাদার। তাঁর নিজস্ব শ্রম, মেধা, অধ্যবসায় ও সততার গুনে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘আলম কন্সস্ট্রাকসন’কে সুপরিচিত করে তোলেন।
তাঁর মাতা একজন মমতাময়ী মা ও গৃহিনী। গৃহিনী হলেও মানুষের কল্যাণে ব্রতী একজন মহিয়সী নারী। পিতামাতার সেবার মানসিকতাই বড় হয়ে নিজ জীবনে লালন করেন। চারবোনের একমাত্র আদরের ভাই ও পিতাপাতার একমাত্র পুত্র সন্তান ড. মোহাম্মদ আলী। বড়বোন আইরিন আক্তার (রাখি) স্নাতকোত্তর, তারপর ড. মোহাম্মদ আলী, তার ছোট তিনবোন শারমিন আক্তার (সাথী) স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী, কামরুননাহার (বীথি) ফার্মেসি স্নাতক। তিনবোন বিবাহিত ও সাইফুন নাহার (দিথি) ঢাকায় নর্থসাউথ বিশ্ববিধ্যালয়ে ফার্মেসী বিষয়ে অধ্যয়নরত।
শিক্ষাসংস্কৃতি’র পাদপীঠ, নওয়াব ফয়জুন্নেছার জন্মভূমি, ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও শচীণ দেববর্মণের কুমিল্লায় মোহাম্মদ আলী’র শৈশব, বাল্যকাল ও যৌবনের অধিকাংশ সময় কাটে। কুমিল্লার ধুলামাটিতে গড়াগড়ি, কুমিল্লার সবুজেই বেড়ে উঠা।
ক্রিকেট ফুটবল ও বিভিন্ন সংগঠনের কাজকর্মে বাল্যকাল কেটেছে। মোহাম্মদ আলী ছোটবেলা থেকেই বিতর্ক সংগঠনের সাথে জড়িত।
কুমিল্লা বিতর্ক পরিষদের আজীবন সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ বিতর্ক পরিষদের সাথেও জড়িত। তিনি স্কুল কলেজে থাকাকালীন নানা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোতেই মোহাম্মদ আলী’র পড়াশোনা। শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি কুমিল্লার মডার্ণ স্কুল।প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে ভর্তি হন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা জিলাস্কুল।
মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিক ভর্তি হন প্রাচ্যের সবচেয়ে পুরাতন ও স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ, কৃতিত্বের সাথে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
কুমিল্লার পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বপ্নের পথে প্রথম ধাপ হিসেবে ঢাকা। ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অফ ল উইথ অনার্স ডিগ্রী এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা ইন ল ডিগ্রী লাভ করেন।
স্বপ্নের আরেকধাপ যুক্তরাজ্য
২০০৯ সালে ডি মন্টফোর্ট ইউনিভার্সিটি লেস্টার এ ভর্তি হন। অত্যন্ত সফলতার সাথে এল এল বি ও এল এল এম (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ল ডিগ্রী অর্জন করেন।
এল এল এম ডিগ্রী শেষে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ দি ওয়েস্ট অফ স্কটল্যান্ড থেকে সফলতার সাথে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
০৭/১১/২০১৯ তারিখে এক আড়ম্বরপূর্ণ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ডক্টর অফ দি বিজনেস এডমিনিস্ট্রেসন উপাধিতে ভুষিত হন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল “বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে কর্পোরেট গোষ্ঠীর সামাজিক দায়িত্ববন্টন ও পালনে অগ্রগতি ও উন্নতি।
শুধু পড়াশোনার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ সুগম করা যায়। মানুষের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন নানামুখী কর্মকান্ড। নানা সংগঠন ও রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা। ড. মোহাম্মদ আলী মানুষের অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে রাজনীতি অনিবার্য।
২০১৩ সালে ইংল্যাণ্ড লেবার পার্টিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিত হাতেখড়ি শুরু, এরপর নানা সামাজিক কর্মকান্ড ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন। দূরদেশে নানাক্ষেত্রে সবাই অসহায়, সহজ ব্যাপারগুলো একটু সাহায্যের হাতের প্রয়োজনে কঠিন লাগে।
ড. মোহাম্মদ আলী ব্যাপারটা বুজতে পেরে বাঙালী কমিউনিটির কল্যাণে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়ান। বাঙালী কমিউনিটির ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা ওবসরকারী সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে নিরলস শ্রম দেন। স্বনামধন্য আইনি প্রতিষ্ঠান দি ল স্কয়ার এর মাধ্যমে নানাপ্রকার আইনি সহযোগিতা প্রদান করেন।
এছাড়া ড. মোহাম্মদ আলী লাল্লিং ইমিগ্রেশন ফার্ম ‘আলী লিগ্যাল এন্ড কমার্শিয়াল’ এর স্বতাধিকারী। যার মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপের সকল প্রবাসী নাগরিকদের নানা প্রকার আইনি সহায়তা ও প্রবাসীদের যেকোন প্রকার জিনিসপত্র বিশ্বস্ততার সাথে দেশ ও দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
পেশায় ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে জনপ্রিয়। একজন সফল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ। তিনি যেকোনো সময় সমস্যায় জর্জরিত প্রবাসীদের কল্যাণ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
ড.মোহাম্মদ আলী বলেন- একজন মানুষ বিদেশে কীভাবে স্থায়ী বসবাস করতে পারেন, সে বিষয়ে তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ইউরোপ, যুক্তরাজ্যে, আমেরিকা, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যায় লোক বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশ যাওয়া ও বিদেশে অবস্থানকারী দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী অভিবাসন নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিবাসনের এই বিষয়গুলো ড. মোহাম্মদ সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন।
সপরিবারে বিজনেস মাইগ্রেশন এবং ইমিগ্রেশন নিয়ে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। আর নিজেকে একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল মোহাম্মদ আলী অনেক বড় মানুষ হবে, ভাল মানুষ হবে, মানুষের সেবাকরবে। ড. মোহাম্মদ আলী মা বাবা’র স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে।
ড. আলী’র মা বাবা বিশ্বাস করেন- একজন মানুষের আসল পরিচয় বহন করে তাঁর ভাল কাজ দ্বারা। যা দ্বারা সে দেশের দশের ও পরিবার পরিজনের সেবা করতে পারবে। মা বাবা তাই সর্বক্ষন তাঁর ভাল কাজে প্রেরণা যোগান।
ড. আলী লেস্টার কমিউনিটির নিকট একজন ভালবাসার নাম, আস্থার নাম। যেকোন প্রয়োজনে ড. মোহাম্মদ আলী সবার পাশে থাকে। ড. মোহাম্মদ আলী লেস্টার ও লেস্টারশায়ার কমিউনিটির নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ও সবাইকে একত্রিত করে ভোটাধিকারের মাধ্যমে সভাপতি -সাধারন পদ স্থির করে দেন। ড. মোহাম্মদ যেকোন মূল্যে কমিউনিটির সবার সাথে সবার বন্ধন দৃঢ় রাখতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন ‘একতাই বল’। একসাথে সবাইকে নিয়ে কাজ করলে যেকোন বড়ধরনের ঝড়ঝাপটা সহজেই সামাল দেওয়া সম্ভব।
ড. মোহাম্মদ আলী ২০১৫ সালে খুব অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন। তাঁর বিয়েতে দেশের সকল স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে দোয়া করেন। তাঁর স্ত্রী একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত নারী। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী একজন প্রকৌশলী। তথ্য ও প্রযুক্তি তার গবেষনার বিষয়।
২০১৯ সালে ৭ইমার্চ তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান। নাম তার জাকোয়ান জাফির আলী। বর্তমানে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, এবং সবাই সেদেশের নাগরিক।
ড. মোহাম্মদ আলী তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের উন্নতি ও অগ্রগতি, গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গার্মেন্টস শিল্পে কর্পোরেট শিল্পগোষ্ঠীর ভূমিকা জোরদার করনে, শিক্ষাগত ও চর্চাগত ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
ড. আলী’র বাল্যবন্ধু ও সহপাঠীদের মত নেয়া হলে সবাই আলীর মানবিক কাজের প্রশংসা করেন এবং ড. মোহাম্মদ আলী যেন আরো মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে দেশ ও দশের মঙ্গলে কাজ করে যায় সে অভিমত পোষণ করেন।