দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন, তখন বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল। ‘অব কি বার, ট্রাম্প সরকার’ বলে মোদি ভারতের স্বার্থের ক্ষতি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় ভারত কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বের দুই প্রথম সারির গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে সম্পর্ক সে কারণে ধাক্কা খায়নি। আগামী জুন মাসে মোদি রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত বছরও ট্রাম্প মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অতি সতর্ক রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তার মুখে বেফাঁস মন্তব্য সহজে শোনা যায় না।
অথচ সেই শলৎস এবার খোলাখুলি যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানালেন। বার্লিনের কাছে একটি স্কুল পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। সে সময় শলৎস বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে সেটা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, জার্মানির জন্যও খারাপ হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সোমবার স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাইডেন বহু বছর ধরে বিভিন্ন পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই বিশ্বকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখতে কী করা উচিত, সেটা তিনি বিলক্ষণ জানেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের কার্যকাল অন্য অনেক দেশের মতো জার্মানির জন্যও যথেষ্ট কঠিন ছিল, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আঙ্গেলা মার্কেলকে সেই ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। তার জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎস সেই চার বছরের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে শলৎস বলেন, সব মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেলে ভবিষ্যৎ মোটেই উজ্জ্বল হতে পারে না। সে কারণে সাবেক প্রেসিডেন্ট সে দেশে বড় বিভাজনের প্রতীক। শলৎস জার্মানিতেও এমন বিভাজন সম্পর্কে সতর্ক করে দেন। তার মতে সমাজে ঐক্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের মনোয়ন পাবেন কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। রন ডিসান্টিস ও অন্যান্য কয়েকজন প্রার্থী ট্রাম্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অন্যদিকে সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, বাইডেন দুই সম্ভাব্য বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় এখনো বেশি সমর্থন পাচ্ছেন। বাইডেন ইতিমধ্যেই দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
জো বাইডেনের নেতৃত্বে আটলান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় ও ঐক্য আরো জোরদার হয়েছে—সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। বিশেষ করে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে সেই ঐক্য জোরদার হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ দেখিয়ে বাইডেনও ট্রাম্পের মতো বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউরোপের ক্ষোভের পাত্র হয়েছেন। তা সত্ত্বেও ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করতে ইউরোপীয় নেতারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।