নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন- প্রধানমন্ত্রী নিজেই বাজার পরিস্থিতি মনিটর করছেন। গতকাল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জনজীবনে অস্থিরতা নিয়ে এক অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য নিয়ে তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে- কোথায় তাঁরা মানুষকে আশ্বস্ত করবেন, উল্টো এসব কথাবার্তা বলে বিভ্রান্ত করছেন…!
সারাদেশে ভোজ্য তেল নিয়ে এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের চাপে দেশেও একাধিকবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরেও বাজারে এখন সয়াবিন তেল নেই। বাজারে তেলের মজুত ঠেকাতে খোলা তেল বিক্রির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এদিকে সয়াবিন তেলের ৬০ শতাংশই খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়, যার মূল ভোক্তা মূলত নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষেরা। বাড়তি দামের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতেও সামর্থ্যহীন তারা। তখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর তো হবেই। টিসিবির ট্রাকের আশায় মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে, কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না, হাতাহাতিতে জড়াচ্ছে, মানুষ ট্রাকের পেছনে পাগলের মতো দৌড়ছে, চলন্ত ট্রাকের ওপর হামলে পড়ছে। সারাদেশের যেন দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে!
একেক সময় একেক পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। কখনো লবণ, কখনো চিনি, কখনো পেঁয়াজ। যেন পালা করে একেক পণ্যের ব্যবসায়ীরা ‘সমঝোতা’ করে নেন বা তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এবার কি তাহলে ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ীদের পালা?
পাইকার ব্যবসায়ীরা বলেন- সরবরাহ ঘাটতি না থাকলে আমরা কেন মাল পাই না?’ তাঁদের আরও অভিযোগ- সরকার নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মিলে ঢুকতে ট্রাকপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করেও নেওয়া হচ্ছে। তেলের বিক্রয় আদেশ (এসও) কিনে ট্রাক নিয়ে এক কোম্পানির মিল থেকে আরেক কোম্পানির মিলে ঘুরলেও সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তাঁরা।
সয়াবিন তেলের বাজারের আধিপত্য হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতে। ফলে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিনতর কোনো ব্যাপার নয়। এরপরও সরকার সেটি পারল না কেন? উল্টো সরকারি সংস্থার কর্ণধারই দাবি করে বসলেন- বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। এখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই টাকাটা লোপাট করল কারা? ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে- দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী তিন মাসের চাহিদা এক লাখ ৫০ হাজার টনের মতো। এখন মিল মালিকেরা বলছেন- তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছেন কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলারদের ভাষ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাহলে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে বা কোন পক্ষ?
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন- প্রতিদিন যদি ৫০০০ টন ভোজ্য তেলে চাহিদা থাকে, তাতে লিটারে ১০ টাকা করে বাড়লে মোট অঙ্কটা অনেক বড় হয়। এভাবে আনুমানিক একটা পরিসংখ্যান আমরা দিয়েছি।’ তার মানে টাকা লোপাটের অঙ্কটা আরও বড়। বাজার নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত সেই অঙ্ক বাড়তেই থাকবে। যদিও সেটি ৫ হাজার কোটি টাকা না হয়ে যায় সেই লক্ষ্যেই নাকি কাজ করছে অধিদপ্তর।
কোম্পানিগুলোর মিলে মিলেও তদারকি শুরু হয়েছে। এখন তেল নিয়ে এই তেলেসমাতি কি সহসা থামবে? নাকি লোপাটের টার্গেট পূরণ হয়নি এখনো! রোজার মাস আসতে আর বেশি দিন নেই। সয়াবিন তেল নিয়ে কারসাজি কি তত দিন পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হবে? অন্য কোনো পণ্যের ব্যবসায়ীরা নিশ্চই তাঁদের পালার জন্য অপেক্ষা করে আছেন! এভাবেই তো দেশের বাইরে একের পর এক ‘বেগমপাড়া’ গড়ে ওঠছে। যতই অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের সাফল্যে আমরা বিভোর থাকি না কেন, সংসদে ষাট শতাংশেরও বেশি সাংসদ যে ব্যবসায়ী সে কথা তো সবারই জানা আছে।