সুপ্তি জামান : বন-জঙ্গলের ধার ঘেঁষে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় আপনমনে বেড়ে উঠত ঢেঁকিশাক। আগ্রাসী আগাছা হিসেবে সুযোগ পেলেই বসতবাড়ি, ফসলের মাঠে অনভিপ্রেত অনুপ্রবেশ করতে এদের জুড়ি নেই। সবুজ ঢেঁকিশাক মাটির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে আর ইটরঙা গেছো ঢেঁকিশাক গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায়। প্রলম্বিত বর্ষায় বরিশালের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে ফসলের মাঠ, জলা-জঙ্গল জলে নিমজ্জিত থাকে, বসতবাড়ির ভিটেগুলো জলের প্লাবন থেকে বাঁচানোর জন্য মাটি কেটে উঁচু করে তার ওপর বানানো হয়। হেমন্তে জলা-জঙ্গল থেকে নেমে যায় জল, জেগে ওঠে বন-বনানী আর মাটি ফুঁড়ে নতুন নতুন গাছগাছড়া তৃণলতা।
ফসিল রেকর্ড অনুযায়ী ৩৫ কোটি বছরের পুরনো উদ্ভিদ ফার্ন। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র উষ্ণ আর্দ্র ছায়া ঢাকা স্থানে ফার্ন জন্মে। ঢেঁকি শাক হিসেবে পরিচিত যে ফার্ন আমরা শাক হিসেবে খেয়ে থাকি তা মূলত ব্রাকেন ফার্ন। তপ্ত মরুভূমি আর এন্টারর্টিকার হিম বরফ ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই ফার্ন দেখতে পাওয়া যায়। ঢেঁকিশাক শাক হিসেবে সমাদৃত হলেও এটি মূলত বিষাক্ত একটি উদ্ভিদ। সব ধরনের ফার্নেই কম-বেশি টেকিলোসাইড নামক বিষ থাকে। ভালোভাবে রান্না করলে বিষ অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। তবু নাগাড়ে ঢেঁকিশাক না খাওয়াই ভালো। ফার্নের পুষ্ট পাতার নিচের দিকে থাকে স্পোর, অপুষ্পক উদ্ভিদটি স্পোরের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। যা খেলে ক্যান্সার হতে পারে। তাই যে কোনো জংলি শাকসবজি খাওয়ার আগে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এবং যথাযথ রন্ধনপ্রনালী অনুসরণ করে তবেই খাওয়া উচিত।
ঢেঁকিশাক পৃথিবীর অনেক দেশেই জনপ্রিয়। ঢেঁকিশাকে রয়েছে প্রচুর আয়রণ ও পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী! দোষ-গুণ নিয়েই যেমন মানুষ তেমন আর কী! ফার্ন শুধু শাক হিসেবেই লোভনীয় নয়, অরনামেন্টাল প্লান্ট হিসেবেও সমান আদৃত। দিন দিন ঢেঁকিশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।