দেশ বিদেশ ডেস্ক : নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৯ জুলাই)। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিক। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও আর ফেরেননি তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৬৪ বছর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন এই কিংবদন্তি। সেদিন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি।
প্রতি বছরের মতো এবারও প্রিয় লেখকের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে গেছেন। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নুহাশ পল্লীতে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরআন তেলাওয়াত করছে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবে। কর্মসূচিতে হুমায়ূন আহমেদের দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতসহ স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া কথাসাহিত্যিকের পরিবারের লোকজন, ভক্ত, বন্ধুরা কবর জিয়ারত ও মিলাদে যোগ দেবেন। দুপুরে মিলাদ মাহফিল শেষে এতিম শিশু ও শিক্ষার্থীদের খাবার বিতরণ করা হবে।
বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়শা ফয়েজের ঘর আলো করে ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। রসায়ন শাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কালজয়ী উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে শক্তিশালী এক কথাসাহিত্যিকের আগমনী জানিয়েছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত সাহিত্যকর্ম তিন শতাধিক। গল্প বলার এক নতুন ধারায় তার সব গল্প-উপন্যাসই যেমন জনপ্রিয় তেমনি জনপ্রিয়তা পেয়েছে হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই ও রূপার মতো অসাধারণ সব চরিত্র।
এক সময় সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি মনোনিবেশ করেন চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণে। কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারি, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের মনে যেমন, তেমনি নুহাশপল্লীর প্রতিটি গাছ, ফুল, পাখি, ঘাসের সঙ্গে মিশে আছেন হুমায়ূন আহমেদ।