দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো অল্প সময়ের মধ্যে সেরে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী সড়কে উঠতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে লম্বা সময় দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে তাদের। গত কয়েক দিনে বিএনপির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে।
ইতিমধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। আর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ। তারা মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে ১৮ মাসের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এর পরও সময়ের প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে কিছুটা উদ্বেগ ও অসন্তুষ্টি আছে। বিএনপি কার্যত যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে কিছুটা জটিলতা এবং সময়ের বিষয় আছে সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে। সেটি নির্ভর করবে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কতটা সংস্কার করতে চায়। এরই মধ্যে ছয় কমিশন বলেছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেবে।
বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সরকার যাতে একটি রোডম্যাপ দিয়ে দ্রুত নির্বাচনমুখী হয়, সে তাগিদও অব্যাহত রাখবে। এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের দাবি রয়েছে নানা মহলের। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এতেও অসন্তুষ্টি আছে বিএনপির। দলটি আশা করেছিল, কমিশন গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সরকার প্রস্তাব চাইবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে কিছুটা জটিলতা এবং সময়ের বিষয় আছে সংবিধান সংস্কারের প্রশ্নে। সেটি নির্ভর করবে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কতটা সংস্কার করতে চায়। এরই মধ্যে ছয় কমিশন বলেছে, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেবে।
এর পরের ধাপ হবে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো। এ প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ের হোক, তা চাইবে বিএনপি।
সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে সময় কমিয়ে আনতে এবং জটিলতা এড়াতে বিএনপি তাদের সংস্কারের প্রস্তাবও আগাম তুলে ধরবে। সে কাজ শুরু হয়েছে বলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিএনপি দুই বছর আগে দেওয়া তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব এবং এ লক্ষ্যে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি সামনে এনে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনাও করছে। এই প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে বিএনপি ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে, বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময়ও করেছে। বিএনপি বলছে, তারা ভোটে নির্বাচিত হলে আন্দোলনকারী দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার করে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে।
মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে বলেন, ‘ওনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। ওনাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা আমার কাছে খুব পরিষ্কার নয়। আমরা যতটুকু বুঝি, এখানে (অন্তর্বর্তী সরকার) কয়েকটা মত কাজ করছে বোধ হয়। কেউ চায় এখনই তারা সংস্কার করে দিয়ে যাবে। কেউ চায়, যে সংবিধান আছে, তার মধ্য থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। অস্পষ্ট কোনো জিনিসই ভালো নয়।’
দ্রুত নির্বাচন কেন চায় বিএনপি
বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার কথা বললেও কার্যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় তারা। এ ক্ষেত্রে বিএনপি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো করে নির্বাচন আশা করে। এর কারণ, বিএনপির নেতারা মনে করেন, নির্বাচন যত পেছাবে, তাতে ভোটের মাঠে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে খুব চাপও দিতে পারছে না। কারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার শেষে তারপরই নির্বাচন করার পক্ষে জনমত বেশি।
যদিও মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে কোনো অস্থিরতা নেই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঠিক করা—এগুলো তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যত দ্রুত করবেন, তত এগিয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে বিচার বিভাগ কিছুটা ঠিক হয়ে এসেছে। আর মৌলিক পরিবর্তনগুলো করবে তো সংসদ। আমি মনে করি না এগুলোর জন্য বেশি সময়ের দরকার আছে। বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করে।’
অবশ্য বিএনপির দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার সঙ্গে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কিছু দলের কিছুটা ভিন্ন অবস্থান আছে। এ দলগুলোর শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘প্রয়োজনীয়’ সময় দেওয়ার কথা বলেছেন।