দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ নিয়োগ পেয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে তাকে দুই বছরের জন্য এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ টি এম শরিফুল আলম সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন, ১৯৮৯-এর ধারা ৯ (২) অনুযায়ী জনাব সৈয়দ জামিল আহমেদকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। সৈয়দ জামিল আহমেদের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৫ সালের ৭ এপ্রিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈয়দ জামিল আহমেদ, ১৯৭৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার স্নাতক হন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে।
একই বছরে তিনি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার টেলিভিশন প্রডিউসারস ট্রেইনিংয়েও প্রথম হন। অতুল মেধার স্বাক্ষর রেখে ১৯৮৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে থিয়েটার আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে অর্জন করেন পিএইচডি ডিগ্রি।
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন। ইংরেজিতে প্রকাশিত তার আলোচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘অচিনপাখি ইনফিনিটি’; ‘ইনডিজেনাস থিয়েটার ইন বাংলাদেশ’, ‘ইন প্রেইজ অব নিরঞ্জন’; ‘ইসলাম থিয়েটার’, ‘এন্ড বাংলাদেশ’, রিডিং এগেইন্সট দ্য ওরিয়েন্টালিস্ট গ্রেইন’; ‘পারফরম্যান্স অ্যান্ড পলিটিকস এন্টুইনড উইথ আ বুদ্ধিস্ট স্ট্রেইন’ এবং ‘অ্যাপ্লাইড থিয়েট্রিক্স; এসেস ইন রিফিউসাল’।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইউপিএল ও এন্ডারসেনের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রকাশকরা প্রকাশ করেছেন তার বই। ৬০টিরও বেশি একাডেমিক প্রবন্ধ তার প্রকাশিত হয়েছে মঞ্চনাটক, প্রায়োগিক মঞ্চনির্দেশনা, লোককথা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের ওপর। এসব প্রকাশিত হয়েছে বাংলা ইংরেজি ছাড়াও ফরাসি, নরওয়েজিয়ান, রাশিয়ান, চীনা ও কোরিয়ান ভাষায়। সদা নবজ্ঞানসন্ধানে ব্রতী সৈয়দ জামিল আহমেদ নর্থ আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার নানা দেশে সেমিনারে বক্তৃতা করেছেন, সেমিনার ও কনফারেন্স পরিচালনা করেছেন। তার নির্দেশিত অনেকগুলো প্রযোজনা রয়েছে, যাদের বিস্তৃতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও কুড়িয়েছে সুনাম।
ভারত, পাকিস্তান ও আমেরিকায় মঞ্চস্থ হয়েছে তার প্রযোজনা, হয়েছে প্রশংসিত। নির্দেশক হিসেবে সৈয়দ জামিল আহমেদের স্বাতন্ত্র্য আদতে চিহ্নিত করা যায় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের ভাষা ও এ অঞ্চলের আদিবাসী চরিত্রাবলির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে, দৃশ্যরূপগত বহুরৈখিক বর্ণনামূলক প্রক্রিয়ায়, উত্তর নাটকীয় কাঠামোতে। তার ২০টিরও বেশি নির্দেশিত নাটক এই কথাকেই সমর্থন করবে। এর মধ্যে রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে করা সেলিম আল দীনের ‘চাকা’, মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’, পালাগান থেকে করা ‘কমলা রানীর সাগর দিঘী’, মনসা মঙ্গল থেকে ‘বেহুলার ভাসান’, সংযাত্রা থেকে ‘সংভংচং’, রবীঠাকুর অবলম্বনে ‘শ্যামার উড়াল’, কাশ্মীরি কবি আগা শহীদ খানের কাব্য অবলম্বনে ‘রিজওয়ান’, শহিদুল জহিরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ এবং সর্বশেষ সারাহ কেইনের ‘ফোর পয়েন্ট ফোর এইট সাইকোসিস’ অবলম্বনে ‘চার দশমিক চার আট, মন্ত্রাস’।
৭০টির বেশি মঞ্চ প্রযোজনার আলোক নির্দেশনা ও ৮০টিরও বেশি নাটকের মঞ্চপরিকল্পনা করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। দেশে-বিদেশে অসংখ্য কর্মশালা করিয়েছেন, একাধিক গবেষণার জন্য পেয়েছেন ফেলোশিপ। নিজের বিভাগ ছাড়াও দেশের বড় নাট্যদলগুলোর জন্য প্রযোজনা নির্দেশনা দিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অলাভজনক ও পেশাদার নাট্যদল ‘স্পর্ধা; ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ’। এই দলটি এরই মধ্যে অনেকগুলো আলোচিত প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে।