দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পাঁচ উপজেলা। সম্পদ নয়, প্রাণ বাঁচানোই মুখ্য হয়ে উঠেছে মানুষের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার। নেই বিদ্যুৎ সংযোগও।
ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপ ও অবিরাম বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় দুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ারসার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দিয়েছেন। তবে দুর্গত এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ও পানির প্রবল স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। অনেকে ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আগে উদ্ধার জরুরি বলে আকুতি জানাচ্ছেন লোকজন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছেন।
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। পানি ক্রমশ ফুঁসছে। বাড়িতে পানির ধাক্কায় সাইডের মাটি সরে রান্নাঘর কাত হয়ে গেছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে যেতে পারে।
যেকোনো সময় আমার ঘরে পানি ঢুকবে। বিদ্যুৎ নেই। ঘরে মা একলা। তাকে যে আত্মীয় কারও বাড়িতে পাঠাব, সেটারও সুযোগ পাচ্ছি না। রাস্তায় হাঁটু পানি। দিশা খুঁজে পাবে না, তাই ভ্যানও চলছে না।
আবার অনেক আত্মীয়ের ঘরে পানি উঠেছে। খাটের নিচে পানি। সবাই খাটের ওপরে বসে আছে। বেরোনোর রাস্তা নেই। ফেনীতে এটা স্মরণকালের সর্বোচ্চ বন্যা। বিশেষ করে আমার থানায় বিগত সময়গুলোতে বন্যা একদমই না হওয়ায় মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার কার্যক্রমের চিত্র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তুলে ধরে জানিয়েছে, ‘ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যার্তদের উদ্ধারে মোতায়েন হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে স্পিড বোট ও হেলিকপ্টার।’
বাংলাদেশ নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার কার্যক্রমের চিত্র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জানিয়েছে, ‘নৌবাহিনীর আরো দুটো কন্টিনজেন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে ফেনীতে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধারকার্যে অংশগ্রহণ করেছে। ডুবুরি সামগ্রী, লাইফ-জ্যাকেট, স্পিড বোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্ধারকার্যে। জরুরি চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
লোকজন ওই পোস্টে মন্তব্য করে উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন। মো. রাসেল লিখেছেন, ‘ফেনী থেকে পুরো দেশের কাছে আবেদন: এই মুহূর্তে খাবার নয়, আগে স্পিড বোট আর ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাঠান। মানুষ বাঁচান! আমাদের বাঁচান।’
ঢাকা কলেজ ফেনী ছাত্র সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ ওয়াহিদ লিখেছেন, প্লীজ উদ্ধার করুন আগে, খাদ্য এখন লাগবে না।
লোকজনকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন সাবিত লিখেছেন, ‘ফুলগাজীর ৭ নং ওয়ার্ড জয়পুর এখন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ! তেমন কোন উদ্ধার কার্যক্রম নেই। কি হচ্ছে, মানুষগুলো কেমন আছেন কেউ বলতে পারছেন না। স্পিড বোট প্রয়োজন। মানুষগুলোকে বাঁচান।
ফেনী শহরের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত। দোকানপাটে পানি প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। এখনো পাঁচ উপজেলার তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বা কোন এলাকায় কেমন আক্রান্ত হচ্ছে তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না।