দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবার মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেন সাংসদ জহর সরকার। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ২০২১ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, জহর সরকার শুধু সংসদ সদস্য পদ-ই নয় বরং রাজনীতিও ছাড়ছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছেন। তৃণমূল সাংসদের এই ঘোষণা কার্যত মমতা ব্যানার্জির সরকারকে আরও চাপে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দেওয়া চিঠিতে জহর সরকার তিনি লিখেছেন, ‘গত এক মাস ধৈর্য ধরে আমি আরজিকর হাসপাতালের ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি। ভেবেছি, সেই পুরোনো মমতা ব্যানার্জির মতো আপনি কেন ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, আন্দোলনে পথে নামা মানুষরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করছেন। কাজেই রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা ঠিক হবে না। এরা কেউ রাজনীতি নয় বরং শুধু বিচার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন।’
এর আগে একাধিকবার মমতা ব্যানার্জি বাম-বিজেপির আন্দোলনের তকমা দিয়েছিলেন। তার দেখাদেখি তৃণমূলের অন্য নেতারাও সেই দাবি করেছেন প্রকাশ্যে। দলের এমন দাবির তীব্র নিন্দা করেছেন জহর। আরজিকর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এর আগে সোচ্চার হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। এবার জহর সরকারের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
সরকারকে নিয়ে একাধিক অসন্তোষের কারণ আগেও ব্যাখ্যা করেছেন জহর। মুখ খুলেছেন দুর্নীতি নিয়ে। মমতাকে দেওয়া চিঠিতে সেই প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। লিখেছেন, ‘মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।
এদিকে জহর সরকারের পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের মিডিয়া বিভাগের প্রধান দেবাংশু কারো নাম উল্লেখ না করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘একজন ছেড়েছেন, আরেকজনও ছাড়ুন। স্রোতের অনুকূলে তো কচুরিপানাও ভাসে, যদি উল্টো দিকে সাঁতার কাটতে নাই পারলেন তাহলে মানুষ জন্ম বৃথা! যুদ্ধের সময় যারা পালায় কিংবা গা বাঁচিয়ে চলে, ইতিহাস তাদের লজ্জার নজরে দেখে।’
পোস্টে আরেকজন বলতে দেবাংশু কাকে বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, প্রতিবাদীদের আন্দোলনে সামিল হওয়া তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই বক্তব্য দেবাংশুর হতে পারে না। কারণ দলের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান কখনও রাজ্যসভার সাংসদকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন না। তাদের দাবি, দেবাংশুর মাধ্যমে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিদ্রোহীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছে।