দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : এ বছর রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ বাবদ ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল বিশ্ব সম্প্রদায়। তবে পাওয়া গেছে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ ও নিরাপত্তায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণ: আমাদের কি কৌশলগত পরিবর্তন দরকার?’ শীর্ষক নীতি সংলাপে এসব কথা ওঠে আসে। ব্র্যাক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আমরা ধনী দেশ না, তাও শুধু প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় মানবতার জন্য প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এটা উচিত ছিল। তবে এটা কতদিন এটা আমরা বহন করব? এমন প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী। তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্যও আরো টাকা দরকার বলে জানান তিনি। একটি স্থিতিশীল মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তুর্কি রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরিন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন রাতের নিরাপত্তা ভালো না। এমনকি রাতে ডাক্তারও হাসপাতালে থাকেন না। প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু সেখানে জন্ম নিচ্ছে। তাদের শিক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাদের প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত তুরস্ক সহায়তা দিবে বলে জানান তিনি। তাছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করার কথা বলেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত। সেখানে অনেক স্বেচ্ছসেবামূলক কাজ হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। তুরস্কেও এমন ৪০ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ক্যাম্পের পরিবেশ খারাপ হচ্ছে দিন দিন। তাদের জীবকার জন্যও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না। যথাযথ অর্থ সহায়তা ছাড়া তাদের জন্য কাজের সুযোগ কম। ক্যাম্প এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি ৪-৯ মিটার নেমে গেছে বলেও জানান এ পরিবেশবিদ। তাছাড়া প্রতিবছর ভূমিধস বাড়ছে। তাই তাদের প্রত্যাবর্তন ছাড়া কোন বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সু জিন রি বলেন, আমরা দীর্ঘ️স্থায়ী সংকটে আছি, জাতিসংঘের সংস্থা হিসেবে এই বিষয়টিকে কৌশলগতভাবে দেখতে হবে আমাদের। ষষ্ঠ বছরে এসে তহবিল হ্রাস পাচ্ছে। এই মুহুর্তে সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও খাবারের মতো নূন্যতম চাহিদাগুলোকে কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা দেখতে হবে। আমাদের সহনশীলতা, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমাজের উৎপাদনশীল অংশ হয়ে ওঠে।
কানাডা হাই কমিশনের রোহিঙ্গা রিফিউজি রেসপন্সের হেড অব কোঅপারেশন বিবেক প্রকাশ বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখছি। কানাডা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এগুলোর মাঝে প্রধান হলো এলপিজি গ্যাস সহায়তা। রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটির ভেতর সামাজিক সংহতি টিকিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে হোস্ট কমিউনিটি নিজেদের পিছিয়ে পড়া বলে মনে না করে। ভুলে গেলে চলবে না যে, এটি বাংলাদেশের একটি মানবিক সংকট।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, গত ৫ বছরে আমরা দারুণভাবে বিশের্ত বড় একটি শরণার্থী জনসংখ্যাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে তাদেরকে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত করার কোন ইচ্ছা নেই আমাদের। কিন্তু এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে শুধু মানবতার দৃষ্টিতে না দেখে নিরাপত্তার দিক থেকেও দেখা উচিত। তাই আমাদের কিছু প্রচষ্টো বদলাতে হবে। এখানে চারটি গবেষণাপত্রে এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে। নিরপাত্তার শঙ্কা কমাতে তাদের শিক্ষা ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবছরই প্রয়োজনের তুলনায় কমে আসছে অর্থায়ন। সেমিনারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সম্ভাব্য সমাধান নিয়েও আলোচনা করেছেন।