দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেছেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদক অনুসন্ধান শুরু না করলে, তিনি হাইকোর্ট যাবেন বলেও জানান। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়ে এই আবেদন জমা দেন তিনি।
এ সময় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। উনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আসছে পত্রিকায়। এটার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনও ইনকোয়ারি হয়নি। ভয়ে কেউ কোনও কথা বলছে না। এটা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। অথচ কারও মুখে কোনও কথা নেই। দুদকও চুপ। তাদেরও বলে অনুসন্ধান করাতে হয়।
তিনি বলেন, আমি বলছি না সাবেক আইজিপি দুর্নীতিবাজ। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, এটার একটা ইনকোয়ারি করা দরকার। কারণ যদি সাবেক আইজিপির এতো সম্পদ থাকে, তাহলে পুলিশ ফোর্সের মধ্যে যারা সৎ অফিসার আছেন তারা খুব বেশি ফ্রাস্ট্রেটেড হবেন। সৎ নাগরিকদের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এটা যদি সত্য হয়, যারা অসৎ আছে তারা প্রতিযোগিতায় নামবে ‘আমরা সবাই বেনজীর হতে চাই’। এর জন্য মনে হয়েছে এটা দেশের জন্য ভয়ানক বিষয়। এটা ইনকোয়ারি হওয়া দরকার। একজন নাগরিক হিসেবে এজন্য দুদকে আমি আবেদন করেছি। দুদক আমলে না নিলে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্টে যাব।
দুদক চেয়ারম্যান বরাবর করা আবেদনে সুমন বলেন, বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর পর অবসরে যান ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর। অবসরের পর বেনজীর আহমেদ চাকরিকালীন স্ত্রী ও মেয়ের নামে অনেক সম্পদ গড়েছেন। যা তার জ্ঞাত আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
আবেদনে তিনি বলেন, বেনজীর ও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ এবং কন্যা সন্তান তাদের বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে বেনজীর তার পদের অপব্যবহার করে উল্লিখিত সম্পত্তি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অর্জন করেছেন। আবেদনে তিনি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, কন্যা ফারহিন রিশতা বিন্তে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের অবৈধ সম্পদ বিষয়ে তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, জানতে পেরেছি প্রাক্তন আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ নিয়ে যে খবর ছাপা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন দুদকে একটি দরখাস্ত দাখিল করেছেন। তার এই দরখাস্তের প্রেক্ষিতে দুদক তার আইন ও বিধি অনুসারে যাচাই-বাছাই করবে। কমিশন যদি মনে করে এটি দুদকের আওতার মধ্যে পড়ে তাহলে দুদক আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। এক প্রশ্নে এ আইনজীবী বলেন, এখানে ব্যক্তি মুখ্য নয়। কে কী সেটি এখানে ইস্যু নয়। দুদক দেখে যে অভিযোগটি তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে কি না। কমিশন দেখবে তথ্যে সত্যতা কতটুকু।
এখানে অনেকগুলো ধাপ আছে। উনি (সায়েদুল হক সুমন) আজকে যে দরখাস্ত দিয়েছেন তা যাচাই-বাছাই কমিটিতে যাবে। কমিটি সেটি দেখে সিদ্ধান্ত দেবে। এরপর কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে কমিশন যদি মনে করে অনুসন্ধান করা উচিত, তারা সেটি করবে। গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।