দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আজ। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের অনন্য একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণে এ দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর এই ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে হাজার বছরের পরাধীনতার বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছিল বাঙালি জাতি।
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দেশব্যাপী পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা, সেমিনার, আলোচনাসভা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ই মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটিই পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরুর দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এর পরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্যে।
৭ই মার্চ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। বাংলার মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সম্পর্ক ছিল। তাই তাঁর ভাষণে মূলত মানুষের মনের কথাগুলো ফুটে উঠেছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা নামের এক অমরবাণী শোনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। শুধু তা-ই নয়, তিনি বীর বাঙালিদের অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উত্কীর্ণ করেন তাঁর ভাষণের শেষ দুটি শব্দে—‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।’
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্যমতায় এক অন্য রকম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে বিশ্ব। লক্ষ শপথের বজ মুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে। সেদিন বঙ্গবন্ধু জনসভার মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে পুরো রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেন। তিনি সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ সেদিনের জনসভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর চশমাটা সেদিন ডায়াসের ওপর রেখে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানিদের প্রতি চার দফা শর্ত আরোপ করলেন, অন্যদিকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। এ ছাড়া এ ভাষণটি পৃথিবীর অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।