সোহেল আহমদ চৌধুরী, বার্মিংহাম প্রতিনিধি : বার্মিংহামে বসবাসরত কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্রইউনিয়ন ও বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মি এবং কমিউনিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষের সকল পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনে স্থানীয় একটি হলে বিশাল আয়োজনে সুধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের প্রবীণ নেতা শহিদ পরিবারের সদস্য আব্দুল ওয়াহিদ মশাহিদের সভাপতিত্বে ও বার্মিংহাম কমিউনিটির প্রবীণ ব্যক্তিত্ব কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি জননেতা নেতা সবার প্রিয় কমরেড মসুদ আহমেদের সঞ্চালনায় উক্ত সুধী সমাবেশের মঞ্চে প্রধান অতিথির সাথে উপবিষ্ট ছিলেন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড নিসার আহমদ ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ কমিটির সম্পাদক মন্ডলির সদস্য ইফতেখারুল হক পাপলু।কমিউনিটির প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশিস্টজনের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মত । উপস্থিত অতিথি বৃন্দ খুব ধৈর্য্য সহকারে পিনপতন নিরবতায় দীর্ঘসময় প্রধান অতিথি ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সিপিবির সাবেক সভাপতির সার গর্ব বক্তব্য শুনেন।তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তোলে ধরেন।নিজেদের দলীয় স্বার্থ কায়েম করতে যেয়ে সাধারণ মানুষ যেভাবে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তাঁর নানা দিক নিয়ে সুন্দর গঠন মুলক আলোচনা করেন।তিনি খুব উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করে ছিলাম এ দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ছাত্র- জনতা নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গনতন্ত্রকে এনেছিল । কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্যি আজ কায়েমি স্বার্থবাদি গোষ্ঠি নিজেদের স্বার্থে এই গনতন্ত্রকে হত্যা করতে কোন দ্বিধা করছেনা । বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাস্ট্রের রিজার্ভ চরম হুমকির মুখামুখি , নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মুল্য খুব বেশী উর্ধ্বমুখী যা সাধারণ মানুষের ধরাছোয়ার বাহিরে।বর্তমান সরকার জনগণের উন্নয়নের চেয়ে দলীয় আধিপত্যে বিস্তারে বেশী মনোযোগি , যার কারণে সমাজে বিস্তার হচ্ছে নানা সমস্যা ও ঘুষ দুর্নীতি ও হত্যা গুমসহ নানা বেআইনি অসামাজিক কাজ।যা নিয়ে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ খুব উদ্বিগ্ন । সভার শুরুতে বার্মিংহাম কমিউনিটির প্রগতিশীল ও মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিশিস্টজনেরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে।
কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ৬০ ও ৭০ দশকের একজন মেধাবি ছাত্র ও তুখোর ছাত্রনেতা ।ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এই মেধাবি ছাত্রনেতা সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ছিলেন ঈর্ষীয় জনপ্রিয় স্বাধীনতাত্তোর প্রথম ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রমান করেছিলেন তাঁর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা। ১৯৭১ সালে সবার সাথে যোগ দিয়ে ছিলেন মাতৃভূমিকে মুক্ত করার মহান ব্রত নিয়ে মহান মুক্তিযোদ্ধে।মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্রইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর তুখোর যুদ্ধা । নিজ গ্রুপের কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালণ করেন একাত্তরের রনাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ।
সাম্যবাদী আন্দোলনের একজন আপোসহীন সৈনিক হিসাবে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা আর আপোসহীন নীতি , একজন সুবক্তা হিসাবে নিজকে নিয়ে যান ছাত্র ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্বে। ধারাবাহিক ভাবে নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় ছাত্রইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসাবে ।
একাত্তরের রনাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় শোষনহীন সমতা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মানে বাম প্রগতিশীল শক্তিই জনগণের শেষ ভরসা ।আওয়ামীলীগ ও বিএন পির শাসন ব্যবস্থার এক মাত্র বিকল্প পথই হচ্ছে বাম প্রগতিশীল শক্তি ।১৯৭২ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র/ ছাত্রীদের নানা দাবী ও রাজপথে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে তাঁদের অধিকার নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন । বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে দেশের প্রতিটি থানা উপজেলা জেলায় সুসংগঠিত পার্টি হিসাবে গড়ে তোলতে তিনি তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। বাংলাদেশ সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সামনের কাতারে থেকে মানুষেরর জন্য , সমাজের পরিবর্তন ও উন্নতির জন্য অদ্যাবধি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। একজন সুবক্তা হিসাবে রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও সাড়া বাংলাদেশ তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা হিসাবে পরিচিত।
সাড়া দেশে খেটে খাওয়া মানুষ ।কৃষক আর মজুরদের সংগঠিত করতে তিনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ ক্ষেত মজুর সমিতি ।তিনি হন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। নব্বই দশকের শুরুতে তিনি দায়িত্ব পান সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের এর পর পর্য্যায়ক্রমে ২০১২ সালে তিনি নির্বাচিত হন সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসাবে।
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম । তাঁর দীর্ঘরাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে অতিবাহিত করেন ।১৯৭৫ সালে বঙ্গ বন্ধু হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রকে হত্যার যে ধারা তৈরি হয়েছিল । বার বার ভুলন্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।স্বাধীনতা বিরোধীদের লাগামহীন আশকারাতেই বার বার বিপন্ন হচ্ছিল যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র- জনতার সম্মিলিত ভাবে যুদ্ধ করে অর্জন করা আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র । জনগণের অধিকার আদায়ে মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে রাজপথে অধিকার আদায়ে ও ছাত্রদের নানা দাবী আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি বার বার ক্ষমতাসীন সরকারের রোষানলে পরে বার বার রাজনৈতিক কারনে জেলে যেতে হয়েছে । ১৯৭৫ সালের পর সামরিক ও স্বৈরাচারি সরকারের রোষানলে পর তিনি দীর্ঘ ৮ বছর কারাবরণ করেন।জেলের জীবন বাদেও হামলা মামলা হুলিয়ার কারণে তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর আত্মগোপনে থেকে তাঁর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালণ করতে হয়েছ । বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে প্রথম শ্রেণীতে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
সুধী সমাবেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পেশাজীবি বিশিস্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ, ডাঃ আব্দুল খালিক, ফয়জুর রহমান এম বি ই, আব্দুর রশীদ ভুঁইয়া ,বশির মিয়া কাদির , কামরুল হাসান চুনু, কাজী জাওয়াদ, কয়সর আহমদ, হেলাল উদ্দিন, সমশেদ বক্ত চৌধুরী, শেবু আহমদ , এনামুল হক নেপা, সৈয়দ নাসির আহমদ,ছয়ফুল আলম, কবির উদ্দিন , মৌলানা আব্দুর রশিদ , সৈয়দ শিপার করিম, ছালেহ আহমদ, বদরুল চৌধুরী , মুরাদ খাঁন ,জাহেদ খাঁন লিটন,মোহাম্মদ মুত্তাকিম, রহমত আলী , নুরুল আফসার টিটু, সৈয়দ মাসুম, ফাতেমা হামিদ, নাজিয়া রশিদ ভুঁইয়া , সুমিতা খাঁন, জিয়া তালুকদার , ফারছু চৌধুরী, সাহিদুর রহমান সুহেল, আতিকুর রহমান, মোফাজ্জল হক , শাওন, সোহেল আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।