দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপ। কাতারের আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপ এ’র দুই দল ইকুয়েডর ও স্বাগতিক কাতার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এর মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে মাসব্যপী বিশ্বকাপের জমাট লড়াই। এই প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ হিসেবে কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে কাতারের এটি প্রথম অংশগ্রহণ। স্বাগতিক হিসেবে কাতার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসর এবার। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খরচ ২২০ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে ২০ গুণ বেশি ব্যয়বহুল এবারের বিশ্বকাপ। এর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরুচে বিশ্বকাপ ধরা হয় ২০১৪ সালের ব্রাজিল আসরকে। ওই বিশ্বকাপে খরচ হয়েছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে ১৫-১৬ গুণ বেশি খরচ হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে ঐতিহ্য ভেঙেছে ফিফা। অতীতে সবসময়ই বিশ্বকাপের আসর বসেছে গ্রীষ্মকালে।
প্রচণ্ড গরমের কারণে মরুর আয়োজন বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে শীতকালে। আর এতে সমস্যায় পড়েছে ইউরোপের লিগে খেলা তারকারা। কেননা ইউরোপে এখন ভরা ফুটবল মৌসুমে। ইউরো লিগে খেলতে খেলতেই বিশ্বকাপে আসতে হয়েছে ফুটবলারদের। আর এতে করে বাড়ছে ইনজুরির মিছিল। শেষ পর্যন্ত বড় তারকারা আসল মঞ্চে কতটা জীবনীশক্তি ধরে রাখতে পারবেন এ নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে দিনকে দিন।
কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দামামা বেজে ওঠার পর থেকেই সাংস্কৃতিক সংঘাত নিয়েছে চরম আকার। বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল জনপদ আরব বিশ্ব। লৈঙ্গিক অসমতা, বিদেশি শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ছাড়াও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে যেতে হয় নাগরিকদের। মানবাধিক ও লৈঙ্গিক অসমতার দাবি তুলে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক দিয়েছে অনেক সংগঠন। অনেকগুলো বিষয় এখনও মীমাংসিত হয়নি।
স্টেডিয়ামে বসে বিয়ার পানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে নতুন করে দেখা দিয়েছে এমন আশঙ্কা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে হলে পুরো শরীর ঢাকা থাকতে হবে এমন নির্দেশনার কথাও শোনা যাচ্ছে। আর এটা যদি হয় তাহলে শাকিরার মতো দুনিয়া কাঁপানো পপ স্টাররা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন না এমন খবরও এসেছে মিডিয়াতে। বলাবাহুল্য গত তিন বিশ্বকাপে শাকিরা ছিলেন অন্যতম আকর্ষণ।
আর কাতার সংস্কৃতির সমালোচনা নিয়েও খোদ পশ্চিমা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে মতভেদ। ফুটবলের অন্যতম প্রধান দুই দেশ পশ্চিম ইউরোপের নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স। কন্ডিশন, ফুটবল বিরুদ্ধ পরিবেশ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এই ধরনের ইস্যুগুলোকে সামনে তুলে ধরেছেন নেদারল্যান্ডসের কোচ ফন গাল। ডাচ কোচ ফন বলেন, ‘এটা মোটেও ভালো বিশ্বকাপ নয়।
এই ইস্যুতে আবার ভিন্ন মত ফ্রান্সের।’ ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ‘খেলাধুলাকে অবশ্যই রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। যে ইস্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। তবে যে দেশে বিশ্বকাপ হচ্ছে সেখানকার কৃষ্টি, মূল্যবোধের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’
তবে সব কিছুর ওপর মাঠের ফুটবল। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার, লুকা মদ্রিচ, কিলিয়ান এমবাপে, লুইস সুয়ারেজদের দিকে তাকিয়ে সারা পৃথিবী। শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ইউরো না লাতিন কে কাকে টেক্কা দেবে কিংবা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তাদের হারানো মুকুট ফিরে পাবে কি না এগুলোই বিশ্বকাপের মূল সুর।