দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে লড়াইয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ জনেরও বেশি এবং আরো ১ হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছে। দেশটিতে অবস্থানরত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘এখানে পরিস্তিতি তরল অবস্থায় আছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তা বলা বেশ কঠিন।’
বেসামরিক শাসনের প্রস্তাবিত স্থানান্তর নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সুদানের রাজধানী খার্তুমে দেশটির সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় গত শনিবার। সংবাদমাধ্যম বলছে, সুদানের সেনাবাহিনী এবং কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-র মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে।
এদিকে সুদানে সমস্ত কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)। দেশটিতে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষে তিন কর্মী নিহত হওয়ার পর রবিবার তারা এ ঘোষণা দেয়।
ডাব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যখন আমরা ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি, তখন সুদানে সমস্ত কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডাব্লিউএফপি ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন সুদানের জনগণকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দল এবং অংশীদারদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে আমরা জীবন রক্ষার এই কাজ করতে পারব না।’
সেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মানুষ যেন রাস্তায় না বের হন। স্কুল, ব্যাংক, সরকারি অফিস সব বন্ধ। দুই পক্ষই দাবি করেছে, তারা বিমানবন্দর-সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি দখল করে নিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস সামরিক নেতা আব্দেল-ফতেহ বুরহান এবং আধাসামরিক বাহিনীর নেতা হামদান ডাগালোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের অবিলম্বে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছেন। এর আগে সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সুদানের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে ‘অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার’ আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, লড়াইয়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেলে তা ‘দেশ ও অঞ্চলের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।’
এর আগে সুদানের চিকিৎসকরা লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি উভয় পক্ষের ‘বহু সংখ্যক’ যোদ্ধার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিলেন। তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। সুদানের চিকিৎসক সংগঠন সতর্ক করেছে, লড়াইয়ের কারণে খার্তুম এবং অন্যান্য শহরের একাধিক হাসপাতাল ‘ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু শহরের চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণ ‘পরিষেবার বাইরে’ রয়েছে বলেও জানানো হয়।
বুরহান দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যূত করেন। এখন সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ফলে কারা সুদানের দখল নেবে তা নিয়ে লড়াই চলছে। সেনার তরফ থেকে ফেসবুকে বলা হয়েছে, হামদান একজন অপরাধী। তিনিই যুদ্ধ শুরু করেছেন। স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।