দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : টানা নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা রুশ এই আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা সহায়তায় পাওয়া অস্ত্র নিয়ে লড়ছে ইউক্রেন। এমনকি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি সহায়তা হিসেবে পাচ্ছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও। আর তাই ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ধ্বংস করতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। আর তা হলো- ইউক্রেনে নিরস্ত্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। অর্থাৎ ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ধ্বংস করতে দেশটিতে নিরস্ত্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে রাশিয়া। বুধবার (৩০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষার কাজে মজুদ অস্ত্র হ্রাস বা কমিয়ে আনতে রাশিয়া এই দেশটিতে নিরস্ত্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে বলে মঙ্গলবার একজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন। যদিও রুশ এসব ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম করে তৈরি করা হয়েছিল। গত ২৬ নভেম্বর ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসন নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রকাশ করে ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে বলা হয়, রাশিয়া ‘সম্ভবত’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে পারমাণবিক ওয়ারহেড অপসারণ করেছে এবং ইউক্রেনে এসব নিরস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনারা।
এরপর ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ওই মূল্যায়ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা মার্কিন সামরিক বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। ব্রিটেনের ওই গোয়েন্দা তথ্যে উন্মুক্ত সোর্স থেকে পাওয়া ছবিকে উদ্ধৃত করে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ছবিতে ইউক্রেনে নিক্ষেপ করা একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে যা ১৯৮০ এর দশকে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম হিসাবে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ওয়ারহেডে সম্ভবত একটি ব্যালাস্ট প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আর এটি এমন একটি সিস্টেম যা ওয়ারহেড না থাকলেও ক্ষেপণাস্ত্রের গতিশক্তি এবং অব্যবহৃত জ্বালানীর মাধ্যমে ক্ষতি তৈরি করবে।ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এই দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মার্কিন ওই সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন: ‘এটি অবশ্যই এমন কিছু যার মাধ্যমে ইউক্রেনীয়দের ব্যবহৃত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি বা প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার এই কৌশল আংশিকভাবে কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষা সরবরাহ শেষ করা এবং অবশেষে ইউক্রেনের আকাশে আধিপত্য অর্জন করা। আর এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্র দেশ ইউক্রেনের জন্য বিমান প্রতিরক্ষা সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করেছে। এটি সোভিয়েত-যুগের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম থেকে আরও আধুনিক।
এদিকে মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন মার্কিন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কিয়েভকে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্য যেসব সামরিক সহায়তার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি তার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে নাজামস (NASAMS) বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ১৪০০ টিরও বেশি স্টিংগার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট সিস্টেম এবং কাউন্টার-আর্টিলারি ও বিমান নজরদারি রাডারসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করেছে।