দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : ইরানের কর্মকর্তারা দেশটির তৈরি প্রথম হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছেন। সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফাত্তাহ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটির ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিটি তোলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডারদের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে।
ইরানের এ পদক্ষেপের ফলে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা সম্পর্কে পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়বে। আইআরজিসির মহাকাশ বাহিনীর প্রধান আমিরালি হাজিজাদেহকে উদ্ধৃত করে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছে, ‘নির্ভুল নির্দেশিত ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার এবং এটি সমস্ত প্রতিরক্ষা ঢাল ভেদ করতে সক্ষম।’
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ দ্রুত এবং একটি জটিল গতিপথে উড়তে পারে, যা তাদের আটকানো কঠিন করে তোলে। গত বছর দেশটি বলেছিল, তারা একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, যা বায়ুমণ্ডলের ভেতরে এবং বাইরে কৌশল চালাতে পারে। রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, ইরানের ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র ‘শত্রুদের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এবং এটি ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রজন্মের অগ্রগতি।’
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি বলেছে, ‘এটি ইসরায়েলের আয়রন ডোমসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী শাসকের সবচেয়ে উন্নত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থাকে বাইপাস করতে পারে।’ ফাত্তাহর সর্বোচ্চ গতি ১৪ মাত্রায় পৌঁছেছে বলেও তারা উল্লেখ করেছে, যা ঘণ্টায় ১৫ হাজার কিলোমিটার। মার্কিন ও ইউরোপীয় বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান বলেছে, তারা তাদের প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে আরো উন্নত করবে।
তবে পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান কখনো কখনো তার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করে। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছিল। ওই সিদ্ধান্তে ছয়টি বড় শক্তির সঙ্গে তেহরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করা হয়। ট্রাম্প পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেন, যার ফলে তেহরান পূর্বে নিষিদ্ধ পরমাণু কার্যকলাপ পুনরায় শুরু করে। সেই সঙ্গে ইরান পারমাণবিক বোমা খুঁজতে পারে—মার্কিন, ইউরোপীয় এবং ইসরায়েলিদের এমন আশঙ্কা পুনরুজ্জীবিত হয়।
তবে ইরান ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা অস্বীকার করে আসছে। পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় তেহরান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা গত সেপ্টেম্বর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে। ইসরায়েল, যাকে ইরান স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে, তারা তেহরানের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিশ্বশক্তির প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে এবং কূটনীতি ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দেয়।