দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : টিকটক বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চীনা কম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পর এনিয়ে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব আরো তীব্র রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বুধবার এই ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটিকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল যেন তারা চীনা কম্পানির মালিকানা থেকে বেরিয়ে আসে, নইলে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়ভাবেই এটি নিষিদ্ধ করা হবে। এরপর বৃহস্পতিবার চীন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ টিকটককে ‘অযৌক্তিকভাবে দমিয়ে রাখার’ চেষ্টা বন্ধ করা। দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কিছু পশ্চিমা দেশের পর যুক্তরাজ্যও সরকারি মন্ত্রী এবং আমলাদের ফোনে টিকটক নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে সরকার এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের কেবিনেট অফিস মন্ত্রী অলিভার ডাউডেন বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেবেন।
টিকটকের মূল মালিক চীনা কম্পানি বাইটড্যান্স। কয়েকবছরে এটি গোটা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয় এক ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অ্যাপটির বিরুদ্ধে বেশ কঠোর অবস্থানে গেছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে। এসব দেশ বলছে, চীনা কর্মকর্তারা এই অ্যাপটির মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্যের অপব্যবহার করতে পারে। টিকটক বিক্রি করে দেপয়ার জন্য চাপ। হোয়াইট হাউস বুধবার জানিয়েছিল, টিকটকের মালিকানা যদি বেইজিংভিত্তিক কম্পানি ‘বাইটড্যান্সের’ হাতে থাকে, তাহলে এই অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে।
কিন্তু টিকটকের একজন মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, টিকটক থেকে চীনা বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার এই আহ্বান বা এটিকে নিষিদ্ধ করার এরকম আহ্বানের কোনো দরকার নেই। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উদ্বেগ থাকে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের তথ্য এবং সিস্টেমের জন্য সেখানে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।টিকটক নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে বেইজিং বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে টিকটক তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি তৈরি করছে।’
চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, ‘অন্য দেশগুলোকে অন্যায্যভাবে দমিয়ে রাখার জন্য ডেটা নিরাপত্তার ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়।’টিকটক নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে যে বিল আনা হয়েছে, হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে সেটিকে স্বাগত জানিয়েছিল। এই বিলের পেছনে ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান—উভয় দলের সদস্যদের সমর্থন আছে।
টিকটকের দাবি অনুসারে, বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটির বেশি মানুষ তাদের অ্যাপ ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ১০ কোটি ব্যবহারকারী আছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তাদের অ্যাপ দারুণ জনপ্রিয়। মানুষ এখন টিকটকে যে পরিমাণ সময় কাটায়, সেটি ইউটিউব, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপকে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে টিকটক নিষিদ্ধ করতে চাইছে, সেটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে বর্ণনা করছেন সমালোচকরা।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মচারীদেরকে তাদের অফিস থেকে দেওয়া ফোনে টিকটক ইনস্টল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডাতেও সরকারি আমলাদের ফোনে টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন যুক্তরাজ্যও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। টিকটক বলছে, যুক্তরাজ্য এরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে সম্পূর্ণ ‘ভুলধারণাবশত আশংকার ওপর ভিত্তি করে’। এর পেছনে মনে হচ্ছে ‘বৃহত্তর ভু-রাজনৈতিক’ বিষয় কাজ করছে।