দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ। যে দল হারবে, তারা বাদ। জয়ী দল চলে যাবে ফাইনালে। এমন গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ আলাদা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের অদৃশ্য দ্বৈরথের কারণে। গ্রুপপর্বে তামিমের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে জিতেছিলেন সাকিব। এবার বাঁচামরার ম্যাচে কে জিতবেন? তা দেখতে মুখিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত তামিমের কাছে হেরে গেলেন সাকিব। মিরপুরে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেট আর ৯ বল হাতে রেখে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখালো ফরচুন বরিশাল।
গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হারের পর প্রথম কোয়ালিফায়ারেও একই প্রতিপক্ষের কাছে ধরাশায়ী হয় রংপুর। পারলো না দ্বিতীয় সুযোগেও ফাইনালে উঠতে। ফলে শুক্রবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ফরচুন বরিশালের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৫০ রানের। রান তাড়ায় নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দেখেশুনে শুরু করেছিলেন তারা। কিন্তু চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই জোড়া শিকার করেন আবু হায়দার রনি। ৮ বলে ১০ করে তামিম ক্যাচ তুলে দেন, এক বল পর এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মিরাজ (১৮ বলে ৮)।
২২ রানে ২ উইকেট হারানো বরিশালকে এরপর টেনে নিয়ে যান সৌম্য সরকার আর মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে ৩৭ বলে ৪৭ রান যোগ করেন তারা। সৌম্য ১৮ বলে ২২ করে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। এরপর মুশফিক ২৭ বলে ৫০ রানের আরেকটি জুটি গড়েন কাইল মায়ার্সের সঙ্গে। মায়ার্স করেন ১৫ বলে ২৮। বাকি পথটুকু ডেভিড মিলারকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন মুশফিক। মুশফিক ৩৮ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন। মিলার করেন ১৮ বলে অপরাজিত ২২।
এর আগে ৭৭ রানে রংপুর রাইডার্সের ছিল না ৭ উইকেট, প্রায় ১৫ ওভার হয়ে গেছে তখন। রংপুরে সংগ্রহ ১০০ রানের আশেপাশে আটকে যাবে, মনে হচ্ছিল তেমনটাই। কে জানতো, শামীম পাটোয়ারী এমন চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করবেন! দলের চরম বিপর্যয়ের মুখে শামীম শুধু হালই ধরলেন না, ২০ বলে ফিফটি করে রংপুর রাইডার্সকে এনে দিলেন লড়াকু পুঁজি। শামীম পাটোয়ারীর ২৪ বলে ৫৯ রানের হার না মানা ইনিংসে ভর করে শেষ ৫ ওভারে ৬৬ রান তুলেছে রংপুর। ৭ উইকেট হারিয়ে তাদের বোর্ডে জমা পড়েছে ১৪৯ রান।
বরিশালের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে রনি তালুকদারের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল মেকশিফট শেখ মেহেদি হাসানকে। মেহেদি সুবিধা করতে পারেননি। ৫ বলে ২ রান করে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ওই ওভারেই সাইফউদ্দিন তুলে নেন সাকিবের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। ৪ বলে ১ রান করে সাকিবও সাইফউদ্দিনের সুইংয়ে পরাস্ত হয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন। দলের বিপদ আরও বাড়ান রনি তালুকদার। কাইল মায়ার্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন ১২ বলে ৮ করে।
১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকতে থাকে রংপুর। ব্যাটিংয়ে নেমে ধুঁকতে থাকেন হার্ডহিটার নিকোলাস পুরানও। রান বের করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচ হয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় এই ব্যাটার। ১২ বলে করেন মাত্র ৩।
সতীর্থদের এই আসা যাওয়ার মাঝেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন জিমি নিশাম। তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হতে গিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনেন। জেমস ফুলারের লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন নিশাম। ২২ বলে ২৮ রানে থামে তার ইনিংস।
৪৮ রানে ৫ উইকেট হারায় রংপুর। বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবি আর নুরুল হাসান সোহান। ১৫তম ওভারে সেট এই দুই ব্যাটারকেই সাজঘরের পথ দেখান জেমস ফুলার। নবি ১৫ বলে ১২ করে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে আর সোহান ১৭ বলে ১৪ করে হন বোল্ড।
সেখান থেকে শামীম পাটোয়ারীর অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। একটা প্রান্ত ধরে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটান এই বাঁহাতি। ২৪ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংসে ৫টি করে চার-ছক্কা হাঁকান তিনি। ফরচুন বরিশালের জেমস ফুলার ২৫ রানে নেন ৩টি উইকেট। ২৭ রান খরচায় দুটি উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।