সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ রোববার সকাল থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের পানির চাপে একটি বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার পাঁচটি হাওরের ফসলের ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
টাঙ্গুয়ার হাওরের কৃষকেরা জানিয়েছেন- উজানের ঢল নামলে প্রথমে আসে টাঙ্গুয়ার হাওরে। এই হাওরে ফসল হয় কম। এটিকে বলা হয় ঢলের পানি ধরে রাখার ‘ট্যাংক’। টাঙ্গুয়ায় তেমন ফসল না হলেও এটি নিজের বুকে পানি ধরে রেখে অন্য হাওরগুলোকে ঢলের কবল থেকে রক্ষা করে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঘমারা এলাকায় গিয়ে আজ দুপুরে দেখা গেছে- উজানের ঢলে এই হাওর কানায় কানায় পূর্ণ। কোথাও কোথাও উপচে পড়ছে। বাঘমারায় যে বাঁধটি দেওয়া হয়েছে, সেটিতে এলাকার গুরমার হাওরের ফসল রক্ষা হওয়ার কথা। তবে এটি ভেঙে গেলে গুরমার হাওরের ফসল তো যাবেই, পানির চাপ গিয়ে পড়বে শালদিঘা হাওরে। হাওরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁধ রক্ষায় ১৫ দিন ধরে ঘুম নেই প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের। রাত-দিন সেখানে কাজ চলেছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দ্বিতীয় দফায় পানির চাপ বাড়ায় মূল বাঁধের পশ্চিম পাশে আফর উপচে সকাল থেকেই পানি ঢুকছিল গুরমার হাওরের খালে। একদিকে পানি ঢুকছে, অন্যদিকে কয়েকজন কিশোর সেখানে মাটিভর্তি বস্তা ফেলছিল। কোথায় কোথায় বস্তা ফেলতে হবে, তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন পাউবোর সিলেট বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম ও তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির। তাঁদের চোখেমুখে ছিল চিন্তার চাপ। এর মধ্যে সেখানে আসেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী। চিন্তার কারণ হিসেবে জানা গেল, মূল বাঁধের নিচ দিয়ে সরু নালার সৃষ্টি হয়েছে। পানি চুইয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে যাচ্ছে।
ইউএনও রায়হান কবির বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধগুলো নিয়েই যত সমস্যা। বাঘমারার বাঁধটি রক্ষায় ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত কাজ করেছি। বাঁধের আশপাশে অনন্ত তিন কিলোমিটারে কোনো বসতি নেই। লোকজন পাওয়া যায় না। শ্রমিকের সংকট। তবু এখানে পালাক্রমে থেকে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করেছি। এখন কী হয় জানি না।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন- এত পানির চাপ সামলানো কঠিন। পানি এখনো বাড়ছে। তবু অনেক বাঁধ টিকে আছে। আমরা সবখানেই কাজ করছি। আগামী ৪০ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই।
তাহিরপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন- ১৫ দিন ধরে মাঠে আছি। অনেক সময় অনেক চিন্তা আসে। একবার মনে হয়, ছোট ছোট হাওরগুলো নিজেদের বুকে পাহাড়ি ঢলের জল নিয়ে হয়তো বড় হাওরগুলোকে রক্ষা করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- সুনামগঞ্জে এবার ছোট-বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টন। শনিবার পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।