নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে একের পর এক অভিযানে মাদকদ্রব্যসহ বিক্রেতারা আটক হওয়ার পরেও থেমে নেই এখানকার মাদকের জমজমাট ব্যবসা। সর্বত্রই বিক্রি হচ্ছে- ইয়াবা থেকে শুরু করে গাঁজা, ফেনসিডিলসহ আরো অনেক কিছু। হাত বাড়ালেই এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য পাচ্ছে তরুণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বেকার যুবকরা। এমনকি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন নেশায়। উঠতি বয়সী একশ্রেণির যুবকরা মাদক ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামেগঞ্জে।
জানা গেছে- অনেকে ধর্মীয় লেবাস পরে ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিক্রি করছে ইয়াবা। গ্রামগঞ্জের কিশোর, যুবকরা ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক হাতের নাগালে পেয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। থানা পুলিশের ভয়ে অতি গোপনীয়তায় আকস্মিক মৃত্যু দেখিয়ে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
র্যাব ব-৮, রেঞ্জ পুলিশ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চার থানা, জেলা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ প্রায়ই বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ অনেককে আটক করে থাকে।
গত শনিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুলসংখ্যক ইয়াবাসহ নগরীর সিএন্ডবি রোড কাজীপাড়া থেকে মিনজার হোসেন (২৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। মোটরসাইকেলযোগে বাকেরগঞ্জ যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয় এবং তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয় বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
এভাবেই প্রায়শই হাজার হাজার পিস ইয়াবা জব্দ হলেও থেমে নেই এর ব্যবসা। ইতিপূর্বে কোস্টগার্ড কুয়াকাটা সংলগ্ন সমুদ্রে ৫ লাখ পিস ইয়াবা, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ বেশ কয়েকটি বড় চালান- র্যাবের অভিযানে কুরিয়ার সার্ভিস থেকে মাদক উদ্ধারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বিগত দিনে যারা ফেনসিডিল বিক্রি করত সেসব চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছে। তাদেরকে এবং তাদের দেওয়া তথ্য মতে, খুচরা ইয়াবা বিক্রেতাদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতার করা হলেও নতুন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অনেকেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে- মাদক বহনে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে ব্যবসায়ীরা। অ্যাম্বুলেন্সে এমনকি লাশের কফিনও মাদক বহনের কাজে ব্যবহার করছে তারা। এছাড়া সবজির ট্রাক, মাছের ঝুড়ি, চিঠির খাম, জুতার সোল, স্কুল ব্যাগে করেও মাদক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাদকের স্পটে। মাদক ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে পছন্দ কুরিয়ার সার্ভিস, যার মাধ্যমে মাদক নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয় মাদকসেবীদের কাছে।
পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একাধিক সদস্য জানান- মাদক কারবারিদের আটক করতে তাদের অনেক সময় এসব ক্রয় করতে হয় এবং সোর্সদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে আর্থিকসহ অনেক ধরনের ঝুঁকি থাকে। কোনো এলাকায় গিয়ে এসব মাদক কারবারিদের আটক করতে গেলে অনেক সময় প্রভাবশালীরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বরিশাল নগরীসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে ছদ্মবেশে ফেরি করেও মাদক বিক্রি করছে একটি চক্র। আর মাদকের ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুব সমাজ। ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে দক্ষিণ জনপদ। নগরীর বস্তিগুলোতে ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু ৭০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত…।