দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : চলতি বছর বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে অভিবাসী বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্সের হার। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি, সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী।এ সময় তিনি বলেন, ‘বিএমইটির (বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ছয় লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কাজের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশি অভিবাসন করেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসন প্রবাহ ৮১.৮৮ শতাংশ বাড়বে। ’
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অভিবাসী গেছেন সৌদি আরব। নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন কাজে যোগ দেন, যা মোট অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ।‘অভিবাসন বাড়লেও সে হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না’ জানিয়ে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বছর রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমবে ৩.১৭ শতাংশ। ’
অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে বেশির ভাগ সময় চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছেন না। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৮১ শতাংশ অভিবাসন বেড়েছে। সে তুলনায় কি উনারা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন? অভিবাসন বৃদ্ধির হারের সঙ্গে রেমিট্যান্সের হার তুলনামূলক যথার্থ? আমার তা মনে হয় না। তাহলে এখানে সমস্যাটা কোথায়? এখানে নিশ্চয়ই আমাদের নেগোসিয়েশনের একটা সমস্যা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিক খাতটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম একটি বড় খাত। তাদের অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হবে, সুযোগ দিতে হবে, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। ’
এই সংকট মোকাবেলায় ছয়টি সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি। এগুলো হলো অভিবাসীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পরিচালনায় সরকার-এনজিওদের একযোগে কাজ করা, নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর প্রয়োগে তরুণ শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করা, অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছু কেস পুনরায় ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বায়রাতে যে অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে, তা অতি দ্রুত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং মানব পাচারসংক্রান্ত মামলাগুলোর প্রসিকিউশনের হার বাড়ানো। ’
আজ জাতীয় প্রবাসী দিবস। প্রতিবছর ৩০ ডিসেম্বর দিবসটি উদযাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এসংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।