দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের একটি গ্রামে সামরিক জান্তার বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৩ জনে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন। দেশটিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রশাসনের জাতীয় ঐক্যের সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী অং মাও এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশটির কেন্দ্রীয় সাগাইং অঞ্চলের কানবালু শহরে মঙ্গলবার যে হামলা হয়েছে তা জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে। পা জি জি গ্রামের একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে সামরিক বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান তাদের গ্রামের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এ সময় স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতারা যে ঘরে মিটিং করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন, সেই ঘরের ওপর ওই বিমান থেকে সরাসরি একটি বোমা ফেলা হয়। এর পরপরই একটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ২০ মিনিট ধরে গ্রামটির ওপর হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পরে বিমানটি ফিরে আসে এবং যারা মরদেহ সংগ্রহের চেষ্টা করছিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। হামলার সময় গ্রামটি লোকে লোকারণ্য ছিল। কারণ আশপাশের এলাকা থেকেও লোকজন এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিল।
হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা অনলাইনে কিছু ভিডিও পোস্ট করে, যাতে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তাতে দেখা যায়, ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। বেশ কিছু ভবনে আগুন ধরে গেছে। গ্রামবাসী বলছে, তারা মরদেহ গুণে দেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কারণে এই কাজটা করা বেশ কঠিন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ওপর নজর রাখে এ রকম একটি সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট অ্যাকলেডের হিসাবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কমপক্ষে ৬০০টি বিমান হামলা চালিয়েছে।
হামলার পরপর সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, এতে ৫০ জনের প্রাণ গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২০টি শিশুও রয়েছে। স্থানীয় একটি অধিকার সংগঠনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যমটি। যদিও সেখানে কোনো অতিরিক্ত হামলা হয়নি, তবে সামরিক জেটগুলো শহরের ওপর দিয়ে উড়তে থাকে, প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল এবং চিকিৎসা পেশাদারদের আক্রমণের জায়গায় পৌঁছতে বাধা দেয়, অং মায়ো মিনের মতে, যিনি সিএনএনকে বলেছেন।
অভ্যুত্থানের পর গঠিত নির্বাসিত জাতীয় ঐক্যের সরকার বলছে, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালে চালানো এ ধরনের হামলায় ১৫৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। অক্টোবর মাসে কাচিন রাজ্যে জাতিগত বিদ্রোহীদের একটি গ্রুপের কনসার্টের ওপর বিমানবাহিনীর জেট থেকে তিনটি বোমা নিক্ষেপ করা হলে কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারায়। গত মাসে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে লেট ইয়েট কোন গ্রামের একটি স্কুলের ওপর চালানো বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন শিশু নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়।