দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের মণিপুরে শুক্রবার ফের সংঘর্ষে অন্তত দুজন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের টেংনোপাল ও কাকচিং জেলায় এদিন সকাল থেকে সশস্ত্র স্থানীয় ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে বলে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে। এ সময় এক ডজন লোক গুলিবিদ্ধ হয়।
সূত্রের খবর, পাল্লেল শহরের কাছে গোলাগুলি শুরু হয়। সেখানে স্থানীয়রা ও আসাম রাইফেলসের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিরাপত্তা বাহিনী জনগণকে ছত্রভঙ্গ করতে শক্তি প্রয়োগ করে। নারীরা এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে রাজ্যের উপত্যকা অঞ্চলে কারফিউ পুনরায় জারি করা হয়েছে।
এদিকে রাজ্যের কুকি ও মেইতেই একে অপরকে হামলার জন্য দায়ী করেছে। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুল্যান্সগুলোকে ছুটে যেতে ও আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে এবং নিরাপত্তাকর্মীরাও আহত হয়েছেন বলে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, স্থানীয় সময় সকাল ৬টা নাগাদ গোলাগুলি শুরু হয় এবং কিছু সময় অন্তর অন্তর চলতে থাকে। বুধবার বিষ্ণুপুর জেলার ফৌগাকচাও ইখাইতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হওয়ার এবং তোরবুংয়ে তাদের নির্জন বাড়িতে পৌঁছনোর প্রয়াসে সেনা ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করার দুদিন পর এ সংঘর্ষ ঘটল।
কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘আরএএফ, আসাম রাইফেলস এবং মণিপুর পুলিশের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এলাকায় উত্তেজনা প্রকট ছিল।’ মণিপুর হাইকোর্টের একটি আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পর ১৮০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওই আদেশে রাজ্য সরকারকে মেইতেইদের তফসিলি আদিবাসীর মর্যাদা দিতে সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল। সেই প্রতিবাদ এখন জাতিগত সংঘাতে পরিণত হয়েছে।
আদালতের আদেশের প্রতিবাদে ৩ মে পার্বত্য জেলায় ‘আদিবাসী সংহতি মার্চ’ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিবাদটি হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে, যখন জেলার চুরাচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুরের মধ্যে সীমান্তের কাছে কুকি ও মেইতেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিরাপত্তা বাহিনী মেইতেই গ্রাম ও কুকি বসতির মধ্যবর্তী এলাকায় ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে, যাতে দুই পক্ষ আবার লড়াই না করে। মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতেই এবং অধিকাংশই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে। অন্যদিকে নাগা, কুকিসহ আদিবাসীরা জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং অধিকাংশই পার্বত্য জেলায় বসবাস করে।