দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) অর্থ কেলেঙ্কারি মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সাজা বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার নাজিবের দণ্ড বাতিলের আপিল খারিজ করে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে কেন্দ্রীয় আদালত।
২০০৯ সালে যখন নাজিব রাজাক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ বা ওয়ানএমডিবি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এই তহবিল থেকে সরানো হয়ে ৪৫০ কোটি ডলার। এর বড় একটি অংশ নাজিব রাজাকের পকেটে গেছে বলে তদন্তে বের হয়ে আসে।
মামলার তদন্তে দেখা গেছে, যেসব ব্যাংক হিসাব থেকে এই ডলার উদ্ধার হয়েছে, সেসব হিসাব নাজিব রাজাকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। প্রথম যখন এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়, তখন পুরো বৈশ্বিক রাজনীতিতে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম চুরি’ বলে আখ্যা দেয়।
৬৯ বছর বয়সী নাজিব রাজাক অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এমনকি মঙ্গলবার রায় ঘোষণার আগেও আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নাজিব বলেন, তিনি বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ও অবিচারের শিকার।
তবে তার এই দাবিকে আমলে না নিয়ে প্রধান বিচারপতি টেংকু মাইমুন তুয়ান মাত রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘মামলার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বাদিপক্ষ যেসব তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করছে, তাতে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আদালত আরও বলেছেন, দেশের প্রচলিত আইন মেনেই এই রায় ঘোষণা করা হচ্ছে, (অভিযুক্তকে) অতিরিক্ত কোনো সাজা দেওয়া হচ্ছে না।’
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নাজিব রাজাক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ সরানোর কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়, যার জেরে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় ঘটে নাজিবের।
নির্বাচনের পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য জনসমক্ষে আসতে থাকে। ২০১৯ সালে নিম্ন আদালতে অভিযোগ গঠন শেষে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই বিচারের রায়েই ২০২০ সালে নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ২১ কোটি রিংগিত জরিমান করেন নিম্ন আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র এবং নাজিবের ঘনিষ্ঠ অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, রায় ঘোষণার পর রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কাজাং কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাজিবকে। পরবর্তী আদেশ আসার আগ পর্যন্ত এই কারাগারেই থাকতে হবে তাকে।