দেশ-বিদেশ নিউজ ডেস্ক : পাকিস্তানের সমস্যার কারণ সম্পদের অভাব নয়, দেশের সমস্যার কারণ হচ্ছে আইনের শাসনের অভাব। আলোচিত লং মার্চ কর্মসূচি শনিবার পাঞ্জাব প্রদেশের গ্যারিসন শহর রাওয়ালপিন্ডিতে পৌঁছলে এ কথা বলেন পিটিআই দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান। ইমরান আরো বলেন, তাঁকে হত্যার জন্য এখনো তিনজন সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। লং মার্চে অংশ নেওয়ার সময়ই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এটিই ছিল তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরান খানের প্রথম প্রকাশ্য সভা।
রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশের আগে রাওয়ালপিন্ডিতে শনিবার এ জমায়েত করে পিটিআই। লং মার্চের চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইমরান এবং ক্ষমতাসীনরা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। রাওয়ালপিন্ডির রেহমানাবাদে দাঁড়িয়ে সমাবেশে সমর্থক-জনতার উদ্দেশে ইমরান বলেন, দেশ একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভয় পুরো জাতিকে দাসে পরিণত করে। এ জন্য তিনি সবাইকে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন ইমরান। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) নেতা প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ইঙ্গিত করে ইমরান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগকে কেন্দ্র করে তাঁরা দেশের স্বার্থের কথা ভাবেননি।
ইমরান খানের ‘হাকিকি আজাদি’ লং মার্চের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শনিবার এ নিয়ে রায় দেন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক। রায়ে বলা হয়, ইমরানকে বহনকারী হেলিকপ্টার ইসলামাবাদের কোথায় নামবে কিংবা লং মার্চ নিয়ে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে শহরের প্রশাসন। আদালত এসংক্রান্ত বিষয়ে মত দেওয়া থেকে বিচারিক কর্তৃপক্ষের বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রশাসন শনিবার রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সংযোগকারী ফৈজাবাদ, জিরো পয়েন্ট ও কোরাল চক বন্ধ করে দিয়েছে। ফৈজাবাদে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ইসলামাবাদের প্রবেশমুখগুলোতে বড় বড় পণ্য বহনের কনটেইনার ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়।
শুক্রবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ দাবি করেন, আল-কায়েদাসহ বেশ কিছু ইসলামী উগ্রবাদী সংগঠন ইমরানের ওপর নাখোশ। ইসলামাবাদে ইমরানের জীবনের শঙ্কা রয়েছে। এ জন্যই রাজধানীতে এরই মধ্যে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। সানাউল্লাহ রাওয়ালপিন্ডিতেই লং মার্চ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
আগামী বছরের অক্টোবরের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ নানা দাবিতে পিটিআই লং মার্চ কর্মসূচি ডাকে। পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে লং মার্চের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে ইমরান খান পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বে পরিচালিত জোট সরকারের কড়া সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন। দেশের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এমনকি ওয়াজিরাবাদের গুলির ঘটনায় একজন সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকারও অভিযোগ আনেন তিনি। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে বলা হয়, ইসলামাবাদে ঢোকার আগে লং মার্চের রাওয়ালপিন্ডির সমাবেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের দুই দিন পরই এ সমাবেশ হয়।